ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছর যশোরের ৭৩৩ মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবছর ৮১টি কমে পূজা হচ্ছে ৬৫২টিতে। এসব মন্ডপগুলোতে সকাল থেকেই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন শুরু হয়েছে। ষষ্ঠী পূজায় এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত সকল মন্ডপ এলাকা।
এ বছর যশোরে পূজা মন্ডপের সংখ্যা কমার জন্য তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ। শহরের লালদীঘি পাড়ে সংগঠন কার্যালয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বছর দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা কমার প্রধান কারণ আর্থিক সংকট, দ্বিতীয়ত সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং মণিরামপুর-কেশবপুর ও অভয়নগর অঞ্চলে ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে মন্ডপগুলো প্লাবিত রয়েছে। ফলে সেখানে পূজা করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে এবার জেলার ৮১টি মন্ডপে দুর্গাপূজা কম হচ্ছে বলে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ জানান।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, বুধবার (৯ অক্টোবর) দেবী দুর্গার মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী। এদিনই প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
পঞ্জিকা মতে, এ বছরে দেবী দুর্গার মর্তে আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। দেবী দুর্গার এ বছর মর্তে আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে, তার ফলাফল হতে পারে মড়ক, যা শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। পূজা শেষে দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল হয় ছত্রভঙ্গ। সেই নিরিখে এ বছর দেবীর স্বর্গে গমন ঘোড়ায় হওয়ার ফলাফল ছত্রভঙ্গ হতে পারে। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি পঞ্জিকা অনুসারে যুদ্ধ, বিগ্রহ, আশান্তি ও বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
সনাতন ‘মহা চন্ডীতে’ উল্লেখ আছে, ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রামচন্দ্র, দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রামচন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন। দেবীদুর্গা বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এদিকে, যশোরে দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিটি মন্ডপেই পাহারায় থাকছে আনসার সদস্যরা, সাথে থাকবে পুলিশ। এছাড়া, মন্দির এলাকায় টহলে থাকছে সাদা পোশাকের পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা এবং তাৎক্ষনিক অভিযানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে একদল পুলিশ সদস্য বলে প্রশাসনিক সূত্রটি জানিয়েছে।
একইসাথে পূজা পরিষদের উদ্যোগে শহরের লালদীঘির পাড় হরিসভা মন্দিরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিটি মন্দির ও মন্ডপের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। এছাড়া বরাবরের মতো পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় লালদীঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকছে। এখানে শহরের ৪৯টি মন্ডপের প্রতিমা নিরঞ্জন করা হবে। বাকিগুলো তাদের স্ব স্ব উদ্যোগে নির্দিষ্টস্থানে প্রতিমা নিরঞ্জন করবেন।
এসব বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, যশোরে এ বছর কিছুটা কম মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন মন্ডপে কোন সমস্যার কথা শোনা যায়নি। বরাবরের মত এবারও যশোরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ইন্সেপেক্টর তরিকুল ইসলাম বলেন, জেলার পূজা মন্ডপগুলোর তালিকা করে সেখানে পুলিশসহ আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। একইসাথে রয়েছে পুলিশের টহল টিম। র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও টহলে থাকবে পূজামন্ডপ এলাকায় বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এএজে