খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

যশোরে পৃথক হত্যা মামলায় নারীসহ ২ জনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

Jashor MAp

যশোরে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সোহানী পূষণ পৃথক হত্যা মামলায় এ রায় প্রদান করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর মাঠুয়াপাড়া গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মো. রাসেল ও অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের মৃত আলমগীর ওরফে আলমের স্ত্রী রেনুকা ওরফে রেনু।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের শাহিনুর ইসলাম ওরফে ইসলাম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। তার একটি হিরো স্পিøœন্ডার মোটরসাইকেল (যশোর-হ-১৭-৭২৬০) ছিলো। ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইসলাম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ইসলামের ভাই শামীম রেজা ১০ আগস্ট ঝিকরগাছা থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি করেন।

খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ১১ আগস্ট বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ঝিকরগাছার মোহাম্মদপুর বাজারের একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে স্থানীয় জনগন নিখোঁজ ইসলামের মোটরসাইকেলসহ মেহেদী নামে এক যুবককে আটক করে। মেহেদী একই উপজেলার গঙ্গানন্দপুর মাঠুয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে।

এ খবর পেয়ে সুফিয়া খাতুন ও তার দেবর শামীম রেজা সেখানে গিয়ে মোটরসাইকেলটি ইসলামের বলে শনাক্ত করেন। পরে মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে গোটা রহস্য।

তিনি জানান, ৯ আগস্ট রাত দেড়টার দিকে সে ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে ছুটিপুর বাজারে যাওয়ার কথা বলে ইসলামের মোটরসাইকলটি ভাড়া করে। মূল উদ্দেশ্য ছিলো তার মোটরসাইকেল ছিনতাই করা। রওনা হওয়ার পর রাত ২টার দিকে গঙ্গানন্দপুর মাঠের জিউলীগাছামোড়ে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা গঙ্গানন্দপুর মাঠুয়াপাড়া গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মো. রাসেলসহ (৩৫) অজ্ঞাত আরও দু’জন ইসলামকে আটকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশটি রাস্তার পাশের ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে তারা মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মেহেদীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ইসলামের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মেহেদী ও রাসেলসহ অজ্ঞাত দু’জনকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। এ মামলার তদন্ত শেষে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের এসআই কাজী সাহিদুজ্জামান পলাতক আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে অপর আসামির শিশু বলে প্রমাণ পাওয়ায় শিশু আদালতে তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেয়া হয়।

পাবলিক প্রসিকিউটর এম. ইদ্রিস আলী জানান, সাক্ষ্য প্রমাণে পলাতক আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। একইসাথে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।

অপর মামলায় বলা হয়েছে, অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আলমগীর ওরফে আলম স্ত্রী রেনুকা ওরফে রেনুর সাথে ২০০৯ সালের মে মাসের প্রথম দিকে ঝগড়াঝাটি করেন। রেনুর অভিযোগ, তার স্বামী আলম প্রতিবেশি মনিরুলের স্ত্রী পান্নার সাথে অবৈধ মেলামেশা করেন। কিন্তু আলম অভিযোগটি অস্বীকার করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে আলম তার স্ত্রীকে মুখে মুখে তালাক দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তওবা পড়িয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলমিশ করিয়ে দেন। এরপর ১৫ মে রাতে রেনু তার মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে ঘরে ঘুমাতে যান। পরদিন ভোর ৫টার দিকে আলমের মেয়ে ফাতেমার ডাকে তার দাদি রাবেয়া খাতুন নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি পুত্রবধূ রেনুকে রক্তমাখা কাপড় চোপড়সহ ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান। ঘরের ভেতর নিচে রক্ত এবং খাটের ওপর আলম উপুড় হয়ে পড়েছিলো। তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। তখন রাবেয়া খাতুনের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। আলমের মেয়ে ফাতেমা লোকজনকে জানায়, ভোরে কোপের শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়।

এ সময় সে দেখতে পায় খাটের পাশে দাঁড়িয়ে ধারালো চাপট দিয়ে তার মা রেনু পিতা আলমকে কোপাচ্ছেন। এ কথা শুনে লোকজন রেনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন, ওইদিন রাত ১১টার দিকে পান্নার ঘরে গিয়েছিলেন আলম। তিনি নিজ চোখে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে রেনুকে থাপ্পড় মেরে ঘরে শুয়ে পড়েন আলম। এ সময় রেনু স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করেন। পরে চাপট এনে ১৬ মে ভোর ৫টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেন। আলম হত্যার ঘটনায় স্থানীয় লোকজন রেনুকে আটক করেন। এ ঘটনায় নিহতের মা রাবেয়া খাতুন পুত্রবধূ রেনুকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে আসামি রেনুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এসআই এমদাদুল হক।

আদালত সূত্র জানায়, মামলায় আসামি রেনুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সোহানী পূষণ তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামি রেনু কারাগারে আটক রয়েছেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!