যশোরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা দু’জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তারা দু’জনই ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
এ অবস্থায় ওই দুই রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি ভারত থেকে ফেরার পথে তার সংস্পর্শে আসা সব ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
একইদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য দিয়েছে, দেশে ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণের অস্তিত্ব মিলেছে। ফলে বাংলাদেশে এই ভাইরাসটির বিপদজনক ধরণ ছড়িয়ে পড়ে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণটি ডাবল মিউট্যান্টসমৃদ্ধ। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতে ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে রোগী মৃত্যু ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে।
যশোরে শনাক্ত দুই রোগী বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবরোধে ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আটকে পড়া বাংলাদেশিরা হাইকমিশন বা উপহাইকমিশনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে গত ২৬ এপ্রিল থেকে দেশে ফিরছেন। গত ৪ মে পর্যন্ত বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে এক হাজার ৫৭৭ জন নাগরিক দেশে ফিরেছেন। যাদের বেনাপোল, ঝিকরগাছা, যশোর শহর ছাড়াও পাশের চার জেলার হোটেলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
এদের মধ্যে ১৬ জন করোনা পজিটিভ যাত্রীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। এরমধ্যে তিনজনের নমুনা পজিটিভ এসেছে। এ তিনজনের মধ্যে দু’জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ও যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ।
তিনি বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের নম্বর হলো বি ১.৬ ১৭.২। তবে এটি ডাবল মিউট্যান্ট নয়। ভারতের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ব্রিটেনে এটি ছিল ৫৯ শতাংশ। তারপরও এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণরোধে সতর্ক হতে হবে। আমরা আশা করছি, যারা ভারত থেকে ফিরছেন তাদের পরীক্ষার পাশাপাশি পৃথক পরিবহন ব্যবস্থায় কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে ও নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত পৃথক রাখতে হবে।’
এদিকে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অণুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকা ওই দুই রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি ভারত থেকে ফেরার পথে তাদের সংস্পর্শে আসা সকল ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমরা যাদের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি, তাদের নমুনার হোল জিনোম সিকোয়েন্স করার উদ্যোগ নিয়েছি। বিষয়টি আইইডিসিআরকে অবহিত করা হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, এ হাসপাতাল থেকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার ও আইইডিসিআর-এ নমুনা পাঠানো হয়েছিল। আমরা এখনো কোনো তথ্য পাইনি। তথ্য পেলে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের টিম প্রটোকল মেনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
খুলনা গেজেট/এমএইচবি