যশোরের আলোচিত ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে জড়িত আরো ৩ জনকে আটক করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত দু’দিন তাদের খোঁজে কয়েকটি স্পটে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক গডফাদার রয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নিচে শ’ শ’ মানুষের সামনে ছুরিকাঘাত করে ও বোমা ফাটিয়ে আর আরএন রোডের আগমনী মোটর্সের ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। ৭/৮ জনের একটি উঠতি দুর্বৃত্ত চক্র বকচরের হাবিবুর রহমান কুটি মিয়ার ছেলে টাকা বহনকারী এনামুল হককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। ব্যাংকের সিসি টিভি ফুটেজ থেকে ছিনতাই বোমাবাজির ঘটনায় কারা জড়িত তা বেরিয়ে পড়ে। অবাধ তথ্যে প্রবাহের কারণে তা গোটা শহরে ভাইরাল হয়ে যায়। খোদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যাওয়ায় বিব্রত পরিস্থিতি পড়ে পুলিশ। যশোর পুলিশ ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মাঠে নামে।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নির্দেশনায় সিসি টিভি ফুটেজের সূত্র ধরে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা, কোতোয়ালি থানা পুলিশ, সদর ফাঁড়ি পুলিশ, চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশসহ কয়েকটি ইউনিটের শতাধিক পুলিশ অফিসার প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাঠে নামে। মাত্র দু’দিনের মাথায় ডাকাতি মিশনে প্রত্যক্ষ জড়িত ৮ জনকেই শনাক্ত করে পুলিশ।
এছাড়া ঘটনার নেপথ্যে থাকা একজন রাজনৈতিক গডফাদারকেও শনাক্ত করা হয়। আটক করা হয় ছিনতাই মিশনের সদস্য যশোরের পুলিশ লাইন টালিখোলার শফি দারোগা ভাড়াটিয়া মুনছুর মোল্লার ছেলে টিপু (৪৫), বারান্দী মোল্লাপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে সাঈদ ইসলাম শুভ (২৪), ধর্মতলা হাচারি পাড়ার রুহুল আমীনের ছেলে বিল্লাল হোসেন ওরফে ভাগ্নে বিল্লাল (২২), সিটি কলেজপাড়া ব্যাটারি পট্টির নিজাম উদ্দিনের ছেলে রায়হান (২৮) ও পূর্ববারান্দী মালোপাড়ার মৃত মুফতি আলী হুসাইনের ছেলে ইমদাদুল হককে (২১)। তাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ২টি চাকু, ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও অ্যাপাচি ৪ভি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তদন্তে আলোচিত এ ঘটনায় জনৈক রাজ্জাক নামে একজনের নাম বেরিয়ে আসে।
এছাড়া এ ঘটনার মূখ্য দায়িত্ব পালন করা ছুরিকাঘাতকারীও শনাক্ত হয়েছে। তাদের সাথে আরো একজন ছিল এ মিশনে বলে তথ্য এসেছে। সিসি টিভি ফুটেজে আসা ওই ছুরিকাঘাতকারীসহ ৩ জনকে আটকে গত দুদিন পুলিশ ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে। বিশেষ করে ধৃতদের কাছ থেকে এবং শনাক্ত হওয়া পলাতক দু দুর্বৃত্তের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে পুলিশ তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ডাকাতিতে যশোরের একজন হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। যিনি রাজনৈতিক গডফাদারও হতে পারেন বলে পুলিশ সূত্র দাবি করেছে। ওই গডফাদারকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ সুপারের এমন বক্তব্য রীতিমত চমকে দিয়েছে যশোরের মানুষকে।
আলোচিত এ ছিনতাই মামলার ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর ইনভেস্টিগেশন শেখ তাসমীম আলম জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত এগিয়ে চলেছে। ১ অক্টোর প্রেসব্রিফিং করে পুলিশ সুপার আটক ও উদ্ধারের ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছেন এর বাইরে নতুন কেনো আটক বা উদ্ধার নেই। তবে মোস্ট ওয়ানটেড তিন জনকে খোঁজা হচ্ছে। দ্রুতই পুলিশ মামলার তদন্ত ও সিন্ডিকেটের মুখোশ উন্মোচন করবে।
খুলনা গেজেট/এমবিএইচ