যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের সোনার মুকুট চুরির সাথে দুর্গাপূজার কোন সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি রেজাউল হক। তিনি শুক্রবার রাতে যশোর শহরের রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশনে শারদীয় দুর্গাপূজা পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই মন্দিরে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। একটা শ্রেণি ওই মন্দিরটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে। স্থানীয়ভাবে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে অন্য কিছুর জড়িত রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধানে কাজ করছে। দেশবাসী একটু অপেক্ষা করেন, দ্রুতই সবকিছু পরিস্কার করা হবে। খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি বলেন, সিসিটিভি থেকে আমরা দেখেছি চোরের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। সে সুকৌশলে কালি মন্দরের ভিতরে ঢুকে প্রতিমার পিছন থেকে চুরির কাজটি করেছে। ব্যক্তিটাকে ক্যামেরার মাধ্যমে চেনা যাচ্ছে। আমরা স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন পেশায় জড়িতদের সঙ্গে আলাপ করেছি। ছেলেটির ছবি তাদেরকে দেখিয়েছি। এখন আমরা অনুমান করছি, ছেলেটি ওই অঞ্চলের নয়। আমরা তার নাম ঠিকানা এখনো পরিচয় পায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যেটা মনে করছি সমাজে কিছু খারাপ মানুষ থাকে। যারা আমাদের উৎসবকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই কাজটি করেছে। এখন ঘরে ঘরে দুর্গাপূজার উৎসব চলছে, আর যে মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে সেটা কালি মন্দিরে। ফলে দুর্গাপূজার সঙ্গে চুরির কোন সম্পর্ক দেখছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি, আশা করি দ্রুত চোরকে চিহ্নত করতে পারবো এবং মুকুটটি উদ্ধার করতে পারবো।
এর আগে ডিআইজি শহরের লালদীঘির হরিসভা মন্দির পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহমেদ, যশোরের রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশন অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানপ্রকাশানন্দসহ পুলিশ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপহার হিসেবে দেয়া প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুটটি চুরি হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। চুরি যাওয়া প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুটটি এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। চুরির ঘটনায় থানায় কোনো মামলাও হয়নি।
এদিকে, যশোরে বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন আজাহারুল ইসলাম। সেনাবাহিনী, র্যাব ও আনসার সদস্যদের নিয়ে তিনি শহরের হরিসভা মন্দির, বেজপাড়া মন্দির, শহরের রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি আইনশৃঙ্খলার সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। একইসাথে মন্দির ও মন্ডপ সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরিদর্শনকালে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ দুর্গাপূজা যেন নির্বিঘেœ পালন করতে পারে সেজন্য অন্তর্ববর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। সেটি নিশ্চিত করাতে সরকার কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, যশোরে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব পালন করছেন হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকলগোত্রের মানুষেরা। জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি ) খালেদা খাতুন রেখা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকারসহ সেনাবাহিনী, র্যাব ও আনসার বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার রেজাউল হক শুক্রবার বিকেলে যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন। তিনি, মিশনের কর্মকর্তা, ভক্তবৃন্দ এবং পূজারিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
অপরদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালি মন্দিরের প্রতিমার মাথা থেকে চুরি হওয়া ১০০ ভরি ওজনের স্বর্ণের মুকুট টি এখনো উদ্ধার হইনি। চুরি যাওয়া স্বর্ণের মুকুটটি উদ্ধারে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শুক্রবার (১১অক্টোবর) সন্ধ্যা নাগাদ মূর্তি চুরির ঘটনায় শ্যামনগর থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।
খুলনা গেজেট/কেডি