খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

মোরেলগঞ্জ পৌর নির্বাচন : প্রচারণায় মাঠ গরম রেখেছে কাউন্সিলর প্রার্থীরা

বাগেরহাট প্রতিনিধি

৩য় ধাপের পৌর নির্বাচনে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট চাওয়া ও প্রচার-প্রচারণায় সরগরম নির্বাচনী মাঠ। মেয়র পদে নির্বাচন না হলেও মাঠ গরম রেখেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পৌরসভা জুড়ে চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। হাট-বাজার, দোকান-পাট, বাসাবাড়ি গিয়ে ভোটারদের দ্বারস্থ হচ্ছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের প্রতিশ্রুতি, প্রার্থীর বংশীয় ও পেশাগত পরিচয়ে করা হচ্ছে ভোট ভিক্ষা। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছুড়লেও ৩০ তারিখের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রত্যেক প্রার্থী। ভোটাররা বলছেন কাউন্সিলর প্রার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে বিবেচনা করে ভোট দেওয়া হবে।

উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যেও অভিযোগ রয়েছে কয়েকজন প্রার্থীর। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরাজি বেনজির আহমেদ।

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পানগুছি নদীর তীরে অবস্থিত মোরেলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই নিয়ে তিনি চারবার মেয়র পদে নির্বাচিত হলেন। পানগুছি নদী এই পৌরসভাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। পশ্চিম প্রান্তে আটটি এবং নদীর পূর্ব প্রান্তে একটি ওয়ার্ড রয়েছে। ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৩ জন এবং ৩টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ১২জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ৯টি কেন্দ্রে ১৬ হাজার ৫‘শ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৮ হাজার ৮৬ জন পুরুষ এবং ৮ হাজার ৪১৪ জন নারী ভোটার রয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি এই পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ তারিখ রাত ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে।

মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা যায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তারা। কেউ আবার নাচ-গানের মাধ্যমেও ভোটারদের মন কাড়ার চেষ্টা করছেন। কোন কোন প্রার্থী ভোটারদের বুকে জড়িয়ে, কানে মুখে কথা বলেও ভোট চাচ্ছেন। অলিতে গলিতে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণার মাইক। প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গানের মাধ্যমেও ভোটারদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌরশহর।

মোরেলগঞ্জ সদরের বাজার ব্রিজ এলাকায় প্রচারণা চালাতে দেখা যায় ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মাসুম ও তার সমর্থকদের। এসময় তিনি ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। নিজের পাঞ্জাবি মার্কা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন ভোটার কাছে।

একটু সামনে দেখা যায়, আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী উঠ পাখি মার্কার গান বাজিয়ে ভোট চাচ্ছেন। তার সমর্থকরা অটোতে চলে গান গেয়ে গেয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন। আাবার বেশি লোক দেখলে সেখানে নেমে নেচে গেয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা।

মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ডস্থ মোড়ে দেখা মেলে কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের। কারণ এই বাস স্ট্যান্ডে পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড মিলিত হয়েছে। ৯টি ওয়ার্ডের ভোটাররাই পেশাগত কারণে এই জায়গায় থাকে। তাই প্রত্যেক প্রার্থীই প্রচারণার ক্ষেত্রে এই জায়গাটিকে বেছে নেয়। শুধু এখানে নয় পৌরসভার সর্বত্রই প্রার্থী ও সমর্থকদের পদচারণা। চাওয়া একটাই ৩০ তারিখের নির্বাচনে শেষ হাসি হাসা। ভোটাররাও প্রার্থীর আচার-আচারণ, পেশা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে বিশ্লেষণ করছেন গভীরভাবে। ভোট তাকেই দিবেন যে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন।

সাধারণ ভোটার মহিদুল, করিম, সুমি বেগম, নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ভোট আসলেই প্রার্থীরা আমাদের কাছে আসেন। আমরাও নির্বাচনে ভোট দেই। আমাদের ভোটেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। কিন্তু এ বছর হিসেবটা ভিন্ন, ভোটের আগেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণে আমরা কাউন্সিলর প্রার্থী যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে যে সব থেকে বেশি যোগ্য, যার দক্ষতা বেশি এবং যাকে বিপদে আপদে পাশে পাই সব সময় তাকেই ভোট দিব। অনেক প্রার্থী আছেন যারা নির্বাচিত না হয়েও বিভিন্ন সময় আমাদের উপকার করেছেন সেসব প্রার্থীদের ভোট দেওয়ারি আশা ব্যক্ত করেন তারা।

২নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নাসিমা বেগম বলেন, আমি দুই বারের কাউন্সিলর ছিলাম। এবারও আমি নির্বাচিত হব। তবে আমার জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলতেছে। তবে এতে কিছুই হবে না। পোস্টার-ব্যানারে ভোট হয় না। আমি মানুষের পাশে থাকি, ভোটাররা ভোট আমাকেই দিবে।

৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্র্রার্থী আক্তারুজ্জামান দুলাল বলেন, আমার ওয়ার্ডে ৪জন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে উঠপাখি প্রতিকে ওলিউর রহমান সুজন নির্বাচন করছেন। ওলিউর হমান সুজন আমাদের অন্য তিন প্রার্থী ও সমর্থকদের নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাচন অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা বিজয় লাভ করব। এছাড়াও কয়েকজন প্রার্থী বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। প্রত্যেক প্রার্থী-ই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরাজি বেনজির আহমেদ বলেন, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি। নির্ধারিত দিনে ও নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের দিনে সহিংসতা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা করে কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কোন কেন্দ্র যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পূর্ণ করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নির্বাচনে প্রত্যেক কেন্দ্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য দায়িত্বে থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!