বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের আওতাধীন ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো দৈন্যদশা ভুগছে। নিরাপত্তাপ্রহরীই এখন ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের। সাধারণ রোগীরা কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তদারকি নেই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। সপ্তাহে একদিন খোলা হচ্ছে একাধিক কেন্দ্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার প্রায় ৪ লাখ মানুষের গ্রামীণ জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীদের সেবাদান কার্যক্রম লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের তত্ত্বাবধানে ১৬ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রগুলোতে জনবল সংকট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনিয়মিত কেন্দ্রে আসা, জরাজীর্ণ ভবন, একাধিক কেন্দ্র খোলা হচ্ছে সপ্তাহে একদিন। মাঠ পর্যায়ে এ কেন্দ্রগুলো তদারকির জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তার পরিদর্শনের কথা থাকলেও তিনি এক বছরের অধিক সময় অনেক কেন্দ্র পরিদর্শনে যায়নি। এ রকম অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান তারেকের বিরুদ্ধে। সেবাদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো থেকে গর্ভকালীন সেবা এনসি, প্রসব সেবা নরমাল ডেলিভারী, কিশোর কিশোরীদের বয়স সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সেবা, ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের সেবা, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহনকারীদের সেবাদান। এ ছাড়াও এ পদ্ধতি গ্রহনকারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারিদের জটিলতার সময় সেবাদান কার্যক্রম। এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ২৩ প্রকারের ওষুধপত্র দেওয়া হয় রোগীদের।
বর্তমানে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এ স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম। ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। সরকারের বছরে এ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে সোমবার হোগলাপাশা ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি খোলা থাকলেও দীর্ঘ ২ বছর ধরে সকল দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাজালাল, রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে যাচ্ছেন ফিরে। কেন্দ্র প্রধান উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও), এফডব্লিউ ভি, আয়া, সকল পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ৮ মাস ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) শারমিন আক্তার মিতু সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন বৃহস্পতিবার এসে রোগী দেখছেন। পার্শ্ববতী চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বিগত ২ বছর ধরে চিত্র একই। সেখানে নিরাপত্তাপ্রহরী রিয়াজুল শেখই একমাত্র ভরসা।
এ কেন্দ্রটিতেও সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার সেবা দেওয়া হয়। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে দৈবজ্ঞহাটী কেন্দ্রের (এফডব্লিউভি) দিলশাদ জোবায়দাস্বর্ণা, তেলিগাতি ইউনিয়নের ঢুলিগাতী পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিত্যাক্ত জরাজীর্ণ ভবন থাকায় ২/৩ বছর ধরে ভারাটিয়া একটি চায়ের দোকানে সেখানে সপ্তাহের একদিন শনিবার সেবা দিচ্ছেন তেলিগাতির সেবা কেন্দ্রর একজন। এ কেন্দ্রটিতেও নিরাপত্তাপ্রহরী এম রহমানই ভরসা। বহরবুনিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় দীর্ঘবছর পড়ে থাকায় সেখানে সেবা দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষতে তাও আবার সপ্তাহে ২/১ দিন। এদিকে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কচুবুনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) নাজমা খাতুন সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবার এ দুদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি রয়েছেন অনুপস্থিত। অনুুরুপ পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর ধরে সপ্তাহে একদিন কেন্দ্র খুলে সেবা দিয়ে থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এফডব্লিউএ মুন্নি আক্তার।
হোগলাপাশা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা ফকিরহাট গ্রামের নাজমা বেগম, বড় হরিপুর গ্রামের রহিমা বেগম, গোবিন্দপুর গ্রামের বিলকিস আক্তার, সাফিয়া বেগম, শিশু রাব্বি শেখ, তানিয়া আক্তারসহ একাধিক রোগী ডাক্তার না পেয়ে র্দীঘ সময় বসে থেকে ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, ৩/৪ মাইল কষ্ট করে পায়ে হেটে এসে ডাক্তার যদি না থাকে এটা খুলছে কেনো? কর্মকর্তারা কি কিছু দেখছে না।
হোগলাপাশা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাজালাল বলেন, ২ বছর ধরে অফিস সকালে খুলি আর বন্ধ করি। আমি কিভাবে ওষুধ দিবো আমিতো ডাক্তার না। অফিসে ঝুঁড়– দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজই আমার একারই করতে হয়। মিতু ম্যাডাম বৃহস্পতিবার এসে ওই দিন রোগী দেখেন।
হোগলাপাশা ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শারমীন আক্তার মিতু, চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা (এফডব্লিউভি) দিলশাদ জোবায়দাস্বর্ণা বলেন, তারা দুইজন মূল কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন বনগ্রাম ও দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নে। সপ্তাহে দুই দিন হোগলাপাশা ও চিংড়াখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান তারেক বলেন, এ উপজেলায় ১৬ টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্রে জনবল সংকটের বিষয়টি ইতোপূর্বে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা এ দুই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার কারনে একাধিক কাজ করতে হচ্ছে তার। তিনি নিয়মিত কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শনে যাচ্ছেননা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সঠিক না। কেন্দ্রগুলোতে কেউ দায়িত্ব অবহেলা করলে খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে