খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

মোখার শঙ্কায় সাতক্ষীরায় অপরিপক্ক আম পেড়ে লোকসানের মুখে চাষী ও ব্যবসায়িরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ঘোষিত সংশোধিত আমপঞ্জি অনুযায়ি জেলায় ১০মে থেকে হিমসাগর আম পাড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে হিমসাগর আম পরিপক্ক হতে আরো ৮/১০ দিন সময় লাগবে। ফলে চাষীরা অগ্রিম তাদের গাছের অপরিপক্ক আম পেড়ে বাজারজাত করছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আম নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় সাতক্ষীরার অনেক চাষি ও ব্যবসায়িরা দ্রুত গাছের আম পেড়ে বাজারে তুলছেন। এতে বাজারে পর্যাপ্ত আমের সরবরাহ থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে চাষীদের। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে আম বিক্রেতাদের।
সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার শহরের সুলতানপুর বড়বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড়বাজারে আম কিনতে আসেন ক্রেতারা।

সরেজমিনে শনিবার (১৩ মে) সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত আম উঠেছে। ভ্যানে ঝুড়ি ভর্তি আম নিয়ে বাজারের অলিতে গলিতে দাড়িয়ে আছেন বিক্রেতার। তবে বাজারের তুলনামূলকভাবে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। দু-একজন ক্রেতা আসলেও আমের যে দাম বলছেন তাতে হতাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা। উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে আম নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

সুলতানপুর বড়বাজারের আম ব্যবসায়ি ফজর আলী খোকা বলেন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ঘোষিত আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের দিন ১২ মে ও হিমসাগর ২৫ মে। যে কারণে চাষিরা বাগানের আম পাড়তে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ ওই তারিখ পরিবর্তন করে আমপঞ্জি এগিয়ে আনা হয়। ফলে বাজারে আমের সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আম নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকায় আগাম আম পাড়ছেন চাষিরা। ফলে বাজারের সব আড়তে আমে সয়লাব হয়ে গেছে। কোনো আড়তে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রকৃত পক্ষে হিমসাগর আম পরিপক্ক হতে আরও ৮/১০ দিন সময় লাগবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার শঙ্কায় ঢাকা ও চট্রগামের আম ব্যবসায়িরা এবার সাতক্ষীরায় আসতে দেরি করছে। যে কারণে সাতক্ষীরার বাজারে ক্রেতার সংখ্যা এখন অনেক কম। যে কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষি বা ব্যবসায়িরা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহরের আম ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান জানান, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের ফলন অন্যবারের তুলনায় অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু আম পাড়ার সময় কমিয়ে দেয়ায় আগে ভাগে আম পেড়ে বাজারে নিতে হচ্ছে। তবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার দাম অনেক কম পাচ্ছি। তিনি বলেন, গত মৌসুমের প্রথম দিকে গোবিন্দভোগ আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছিলাম। তবে এ বছর আম ভেদে গোবিন্দভোগ আমের দাম বলছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বাইরের পর্যাপ্ত ক্রেতা না আসায় আমের দাম অনেক কমে গেছে। গত ঝড়ের কারণে তার প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল। এবার বাজারে এমন দাম গেলে এ বছরও আমার কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে বলে মনে হচ্ছে।

বড়বাজারের কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, তীব্র গরমে কয়েক দিনের মধ্যে আম পেকেছে। তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানছে উপকূলে। যে কারণে চাষিরা আগাম আম পেড়ে ফেলছেন। গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আমের চাহিদা অনেক কম থাকায় জেলার বাইরের আম ব্যবসায়ীরা এখনো আসেননি। তবে হিমসাগর আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে ১০ মে থেকে। এসময় জেলার বাইরের ব্যবসায়িদের আসার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে অনেক ব্যবসায়িরা এখনো পর্যন্ত এসে পৌছায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যাপ্ত আম ব্যবসায়ীরা বড়বাজারে আসবেন এবং আম ক্রয় করবেন। ফলে ক্ষুদ্র আমচাষিরা ও কৃষকরা লাভবান হবে বলে আমরা আশা করছি।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ৫ মে প্রথম দফায় গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুররু হয়েছে। হিমসাগরের জন্য ১০ মে, ল্যাংড়ার জন্য ১৮ মে, আ¤্রপালি ২৮ মে থেকে পাড়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।

আমের কাঙিক্ষত দাম না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চাষিরাও একই আশঙ্কায় অল্প সময়ের মধ্যে আম সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসছেন। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভার কেটে গেলে বাজার স্বাভাবিক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!