মোংলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরোধপূর্ণ জমিতে পুলিশের সহায়তায় রাতের আধারে জোরপূর্বক কাটাতারের বেড়া ও সিমানা পিলার দেয়ার অভিযোগে মোংলা থানার এসআই মিজানকে স্টান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এনিয়ে দ্বিগরাজ এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই কাটা তারের বেড়া ও সিমানা পিলার সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। তবে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন জেলা পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়।
প্রতিপক্ষ বলছে, ৩০ লাখ টাকায় ২৬ শতক জমি ক্রয় কররেও প্রতিপক্ষ শুশান্ত, সিদ্ধার্থ ও কার্তিক গং দখল দিচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা মৌজার এস এ ৭৯ ও ১৮৭ নং খতিয়ানে একটি জমি থেকে সুধির রায়ের ছেলে সিদ্ধার্থ রায় ২৬ শতক জমি বিক্রি করে মোসাম্মাদ হুরুন নেছা খনম হিরার নিকট। কিন্ত হিরা বেগম ওই জমির কবলা দলিল নেয়ার সময় সম্পূর্ণ জায়গা বুঝিয়া নেয় এবং চৌহদ্দি দিয়ে ওই জমিতে ঘর বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে। কিছু দিন যেতে না যেতেই হিরা বেগম তার দখলকৃত জমি রেখে পুনরায় শুশান্ত, কার্তিক ও অধির রায়ের জমির মধ্যে পাবে বলে দাবি করে।
এ নিয়ে সুশান্ত গংদের সাথে হিরা বেগমের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিষয় থানার একটি আবেদনের সুত্রধরে প্রথমে এস আই আঃ আহাদ সমাধানের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। পরবর্তিতে গত শুক্রবার ও শনিবার দিনব্যাপী দু’গ্রুপের সাথে মিট মিমাংসার জন্য মোংলা থানার এস আই মিজানুর রহমান ওই জমিতে সার্ভেয়ারে মাধ্যমে মেপে জোরপূর্বক কাটা তারের বেড়া ও সিমানা পিলার পোতার নির্দেশ করেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয় এবং বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করে শুশান্ত, কার্তিক ও অধির রায়সহ অন্যান্যরা।
বিরোধপূর্ণ এ জমি নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে থানার ওসিসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের দেয়া বেড়া-ঘেরা উঠিয়ে দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এস আই মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক এসআই মিজানকে মোংলা থানা থেকে সরিয়ে শরণখোলা থানায় স্তানান্তর করা হয়েছে।
তবে প্রতিপক্ষ হিরা বেগম বলেন, ‘শুশান্ত, সিদ্ধার্থ ও কার্তিক গংয়ের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ২৬ শতক জমি ক্রয় করার প্রায় দুই বছর যাবত বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমি আমার ক্রয়কৃত জমি বুঝে পাওয়ার জন্য প্রতিপক্ষ শুশান্ত ও কার্তিক গংদের কাছে বহুদিন ধরে অনুনয়-বিনয় করে আসছিলাম কিন্ত ২৬ শতক জমি থেকে মাত্র ৭ শতক জায়গা ভোগ দখলে দেয়। উল্টো আমার সিমানা গেট ও বেড়া-ঘেরা ভাংচুর চালায় তারা। তাই এর প্রতিকার চেয়ে এবং বাকি জমি টুকু পাওয়ার জন্য মোংলা থানায় আবেদন করলে এস আই মিজান স্থানীয়দের সাথে নিয়ে সার্ভেয়ারদের মাধ্যমেই কাটাতারের বেড়া দিয়ে সিমানা নির্ধারণের সহায়তা করছে মাত্র।
মোংলা থানার ওসি মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী জানায়, এস আই মিজান এলাকার শান্তি শৃংঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে, পুলিশ প্রশাসন কখনও ইচ্ছা করে কারো জমির সিমানা দিতে পারে না। দ্বিগরাজ এলাকায় যাই হয়েছে, ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি এখন শান্ত। এস আই আহাদকে প্রচলিত নিয়মে আগেই বদলি হয়েছে এবং এস আই মিজানুর রহমানকে তাৎক্ষণিক শরণখোলা থানায় বদলি করা হয়েছে। যে কোন সময় পুলিশের চাকরিতে বদলি প্রচলন রয়েছে এমনটাই বলেন এ কর্মকর্তা।
জেলা পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, জমির সীমানা দেয়া পুলিশের কাজ নয়, বিষয়টি নিয়ে অধিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পুলিশ প্রশাসন এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
খুলনা গেজেট/এনএম