খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
ডিএনএ টেস্ট’র ফল প্রকাশ

মোংলার চিলায় কবর দেয়া সেই লাশ হিলটনের নয়; ব্যবসায়ী মাহে আলম’র

মোংলা প্রতিনিধি

মোংলার চিলা গ্রামে হিলটন নাথ হিসেবে কবর দেয়া মরদেহ প্রকৃত পক্ষে ব্যবসায়ী মাহে আলম’র হবে। বাংলাদেশ পুলিশ এর ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি সিআইডি মালিবাগ শাখার ১ আগস্ট প্রকাশিত রিপোর্টের ফলাফলে এ তথ্য জানা যায়। গত ১৪ এপ্রিল পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে দাকোপ থানা কর্তৃক হস্তান্তকৃত হিলটন নাথকে চিলা গ্রামে কবর দেয়া হয়। মোংলার সুমন রানা কবর দেয়া হিলটন নাথ’র লাশকে পিতা মাহে আলম’র লাশ দাবি প্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল দাকোপ থানায় জিডি করেন। এই পরিস্থিতিতে দাকোপ থানার মামলায় আদালতের নির্দেশে সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ডিএনএ টেস্ট’র মাধ্যমে প্রমাণ করে হিলটন নাথ হিসেবে কবর দেয়া লাশ হিলটনের নয়; লাশটি হবে সুমন রানার পিতা ব্যবসায়ী মাহে আলম’র।

ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি সিআইডি মালিবাগ ঢাকার ডেপুটি চীফ ডিএনএ এনালিস্ট স্বাক্ষরিত রিপোর্টে (স্মারক নং-২৩-০১৭৭৫/১, তারিখ- ০১-০৮-২০২৩ ) জানা যায়, মোংলার চিলা গ্রামে কবর দেয়া হিলটনের লাশ হবে মোংলার ব্যবসায়ী মাহে আলম’র। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ”গ” অঞ্চল খুলনার নির্দেশে গত ৯ মে ডিএনএ টেস্ট’র জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবরেটরি হিলটন নাথ’র মা বিথীকা নাথ এবং মাহে আলম’র ছেলে সুমন রানার রক্ত নমুনা হিসেবে গ্রহণ করে (জিআর মামলা নং- ৬৯/২৩ দা:)।

দুই মাস বিশ দিন পরে ১ আগস্ট প্রকাশিত ডিএনএ টেস্ট’র ফলাফলে সিআইডি’র ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম টুটুল বলেন, ‌‌ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত মৃতদেহ বিথীকা নাথের জৈবিক সন্তান নয়।

ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম টুটুল আরও বলেন, ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত মৃতদেহ সুমন রানার জৈবিক পিতা।

উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজলে অর্ধগলিত পাওয়া একটি মৃতদেহ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল বিকেলে খুলনার দাকোপ থানা পুলিশ সুন্দরবনে নিখোঁজ জেলে হিলটন নাথ’র পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। অন্যদিকে ১০ এপ্রিল মোংলার ব্যবসায়ী মাহে আলম নিখোঁজ হন। ১৪ এপ্রিল সকালে মাহে আলম’র ছোট ছেলে সুমন রানা মোংলা থানায় পিতার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিডি করেন। জিডি নং- ৬৬০। পরবর্তীতে হিলটন নাথ হিসেবে ১৪ এপ্রিল হস্তান্তরকৃত লাশের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে একই লাশকে সুমন রানা তার পিতা মাহে আলম’র লাশ দাবি করেন। এ ব্যাপারে সুমন রানা ২৮ এপ্রিল দাকোপ থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং- ১০৯৮, তারিখ- ২৮-০৪-২০২৩।

এছাড়া হিলটন নাথ’র মা বিথীকা নাথ দাকোপ থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে খুন করে লাশ গুম করার অপরাধে ( ধারা ৩০২/২০১ পেনাল কোড ১৮৬০ ) একটি মামলা দায়ের করেন। দাকোপ থানা মামলা নং- ১৬, তারিখ ১৫-০৪-২০২৩। অন্যদিকে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ অন্যান্য আলামত দেখে সুমন রানা মামলা দায়ের করতে চাইলে মোংলা থানা প্রথমে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-২ বাগেরহাটের আদেশের প্রেক্ষিতে মোংলা থানা মামলা গ্রহণ করে। ৩৬৪/১১৪/১০৯/৩৪ পেনাল কোড ১৮৮৬০ ( একই উদ্দ্যেশ্যে হুকুমদানের মাধ্যমে অপহরণ ও সহায়তা করার অপরাধ ) মোংলা থানা মামলা নং- ১৬, তারিখ ১১-০৫-২০২৩।

ডিএনএ টেস্ট’র ফল প্রকাশের পর ব্যবসায়ি মাহে আলম’র ছোট ছেলে সুমন রানা’র কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু চিলায় তিন মাস আঠাশ দিন আগে কবর দেয়া লাশ হিলটনের নয়; সেটি আমার বাবা মাহে আলম এর এটা এখন প্রমাণিত। প্রথমত আদালত এবং প্রশাসনের মাধ্যমে লাশ উত্তোলন পূর্বক দ্রুত ইসলামী রীতি অনুযায়ি লাশ দাফন করতে চাই। একই সাথে বলতে চাই আমার বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করে লাশ গুম করার প্রক্রিয়ার সাথে যারা যুক্ত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি।

এ প্রসঙ্গে ভুল লাশ হিসেবে কবর হওয়া সুন্দরবনে নিখোঁজ হিলটন নাথের ভাই সাগর নাথ বলেন, ডিএনএ টেস্ট’র রিপোর্ট এখনো হাতে পাই নাই। রিপোর্টের ফলাফলে যদি কবর হওয়া লাশ ব্যবসায়ী মাহে আলম’র হয় তাহলে আমরা আমাদের ভাই হিলটন নাথকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক প্রশাসনের কাছে সেই দাবি করছি।

ডিএনএ টেস্ট’র ফলাফল এবং মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো ইনভেষ্টিগেশন খুলনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আদালত এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাহে আলম’র ছেলে সুমন রানাকে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হবে। হিলটন নাথ’র মা বিথীকা নাথ ভুল তথ্য দেয়ায় মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হবে। আর মাহে আলমকে পরিকল্পিত ভাবে খুন এবং লাশ গুম করার অভিযোগ থাকলে মাহে আলম’র পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক মামলা করতে হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!