চা পানের বিরতির ঠিক আগের বলে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি ভাঙল বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এক ওভারের শেষ বলে হাফসেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমান্নেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরের ঠিকানা ধরিয়ে দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। পুরো সেশনে বাংলাদেশের সাফল্য এই উইকেটটিই।
তবে শেষ বলে উইকেট পড়লেও পাল্লেকেলে টেস্টের মাঝপথ পেরিয়ে অবশেষে একটি সেশন নিজেদের করতে পেরেছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের প্রথম দুইদিন নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে। তৃতীয় দিন সকালের সেশনটি কেটেছে দুই দলের সাম্যাবস্থায়। তবে দিনের দ্বিতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কাই আধিপত্য বিস্তার করেছে।
তৃতীয় দিনের এই দ্বিতীয় সেশনটিতে ২৮ ওভারে ১ উইকেট না হারিয়ে ১০৩ রান করে ফেলেছে শ্রীলংকা। সবমিলিয়ে তাদের সংগ্রহ ৩৯ ওভারে ১ উইকেটে ১১৪ রান। বাংলাদেশের করা ৫৪১ রানের জবাবে তারা পিছিয়ে রয়েছে ৪২৭ রানে। হাতে রয়েছে আরও ৯টি উইকেট।
অবশ্য থিরিমান্নে ফিরতে পারতেন আরও আগে। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভিউ না নেয়ার ভুলে পুড়তে হয়েছে টাইগারদের। তাইজুল ইসলামের করা টার্নিং ডেলিভারিটি আঘাত হানে বাঁহাতি ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নের পায়ে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ।
পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সেই বলটি আঘাত হানত লেগ স্ট্যাম্পে। রিভিউ না নেয়ার হতাশায় ডুবতে হয় বাংলাদেশকে। তখন ৫৮ রানে খেলছিলেন থিরিমান্নে। পরে সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে ফিফটির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দিমুথ করুনারাত্নে অপরাজিত রয়েছেন ৪৩ রানে।
এর আগে বাংলাদেশ দল ইনিংস ঘোষণা করেছে ৭ উইকেট হারিয়ে ৫৪১ রানে। দিনের পঞ্চম ওভারেই দলীয় ৫০০ রান পূরণ করে বাংলাদেশ। এর সঙ্গেই যেন মেলে না হারার নিশ্চয়তা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো দলের ৫০০ রান করা মানেই, ম্যাচের ফলাফল হয় ড্র নয়তো লঙ্কানদের পরাজয়। চলতি ম্যাচের আগে ৫২ বার প্রতিপক্ষকে ৫০০ রান করতে দেখেছে লঙ্কানরা। যেখানে তারা হেরেছে ২৯ ম্যাচে, ড্র হয়েছে বাকি ২৩ ম্যাচ।
আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৩তমবারের ৫০০ রান করল কোনো দেশ। ম্যাচের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় ড্র-ই হতে পারে সম্ভাব্য ফলাফল। তবে দারুণ বোলিং করতে পারলে হয়তো ম্যাচ জিতেও নিতে পারে সফরকারী বাংলাদেশ। অবশ্য ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে ৩৬ ওভার পর্যন্ত উইকেটবঞ্চিতই রেখেছে স্বাগতিকরা।
প্রথম সেশনের ৩৫ মিনিট বাকি থাকতে ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। পরিকল্পনা ছিল মধ্যাহ্ন বিরতির আগে অন্তত ১-২টি উইকেট তুলে নেয়া। সে লক্ষ্যে বিরতির আগে মাত্র ৮ ওভারেই চারজন বোলার ব্যবহার করেছেন মুমিনুল। কিন্তু মেলেনি সফলতা।
পরে দ্বিতীয় সেশনের ২৮ ওভারে এসেছে ১টি উইকেট। তবে এর আগে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি লাহিরু থিরিমান্নে। চা পানের বিরতির ঠিক আগের বলে তিনি আউট হয়েছে ৫৮ রানে। অন্যদিকে ফিফটির পথে রয়েছেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে। তার সংগ্রহ ৪৩ রান।
এদিকে আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে ৫২০ রানের কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। তবে এর চেয়ে আরও ২১ রান বেশি করল টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বোলার-ফিল্ডারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে ১৭৩ ওভারে ৭ উইকেটের ৫৪১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
আজ (শুক্রবার) সকালে ৪ উইকেটে ৪৭৪ রান নিয়ে খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দিনের ১৮ ওভার ব্যাটিং করে ৩ উইকেট হারিয়ে আরও ৬৭ রান যোগ করতে পেরেছে সফরকারী। আজ ফিফটি করেছেন মুশফিকুর রহীম ও লিটন দাস। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৬৮ রান করে।
প্রায় সোয়া দুই দিন ধরে ব্যাট করে ১৭৩ ওভার করা ৫৪১ রানের ইনিংসের মাধ্যমে পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের রেকর্ডবুকে উঠে গেছে বাংলাদেশের নাম। এই মাঠে টেস্ট সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এখন টাইগারদের। তারা ভেঙেছে ২০১৮ সালে ভারতের করা ৪৮৭ রানের রেকর্ড।
উল্লেখ্য, নিজেদের ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি ওভার মাত্র একবারই খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে ১৯৬ ওভার খেলেছিল মুশফিকুর রহীমের দল। সেই ইনিংসে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৬৩৮ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।
খুলনা গেজেট/কেএম