সাতক্ষীরায় বেতনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাঁধ গত দুই দিনেও মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢোকা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর নাগাদ সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টির অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর। তুলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেতনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতার শ্মশানঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোর বেড়িবাঁধ সোমবার সন্ধ্যায় ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, সদর উপজেলার বেনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, নিমতলাসহ কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরোনো সাতক্ষীরা এলাকার ঘুটেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছ, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবেশতিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকাসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার মাছ ও কাঁকড়ার ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর ও আমন ধানের খেত।
তালা উপজেলার হাজরাতলা গ্রামের কবীর হোসেন, দক্ষিণ নগরঘাটা গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম, রথখোলা গ্রামের আরিফ হোসেন ও আবদুর রহমান জানান, তাঁদের বাড়ির আঙিনায় হাঁটুসমান পানি। আশপাশের ৫০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টি থেমে গেলেও বেতনা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা দিয়ে পানি ঢুকছে। বৃষ্টিতে হাজরাতলা গ্রামের জিয়াদ আলী মোড়ল (৫৫), আবদুর রকিব গাজীসহ (৫০) কয়েকজনের কাঁচা ঘর পড়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, ৪ হাজার ৭৮২ হেক্টর আয়তনের ৫ হাজার ৭২১টি মাছের ঘের ও ৭৯৭ হেক্টর আয়তনের ১ হাজার ৮২৩টি পুকুর-দিঘি তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ঘের ও পুকুরের মাছ, স্লুইসগেটসহ সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বলেন, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের ইটেগাছ, মধুমল্যারডেঙ্গী, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, পলাশপোল, মেঠোপাড়া, কাটিয়া, মিলবাজার, থানাঘাটা, পুরোনো সাতক্ষীরা, রথখোলা, কুকরালি, দোহখোলা, চালতেতলা, বাটকেখালীসহ পৌর এলাকায় পানি উঠেছে। এসব এলাকার ৬০-৭০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বাইরে বের হতে পারছেন না। তিনি বলেন, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার বড় একটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, শনি থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চার দিনে ৯৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ২৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। সোমবার বিকেল থেকে জেলায় বৃষ্টি হয়নি। তিন-চার দিনের মধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরা বেতনা নদীর বেনেরপোতা এলাকার বাঁধের ২৫-৩০ মিটার ধসে পড়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে মেরামতের উদ্যোগ নিয়ে বস্তা ও বাঁশ পাঠানো হয়েছে। বড় গাছ (বল্লি) না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বুধবার সকাল থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত ভাঙ্গন পয়েন্ট সংস্কার করা সম্ভব হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে