খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ মাঘ, ১৪৩১ | ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ইতালির রোম থেকে ছেড়ে আসা বিমানের একটি ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক, নিরাপদে অবতরণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে
  জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম
  উত্তরা পূর্ব থানার হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ডে

মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি অনিশ্চয়তায় ভ্যান চালকের মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাবা ভ্যান চালক। মা সেলাই মেশিন চালিয়ে কোন মতে চালান সংসার। এনজির ঋণ ও মায়ের সামান্য গহনা বন্ধন রেখে মেডিকেলে ভর্তি কোচিং এর পড়ালেখার খরচ বহন করেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাদের মেয়ে মেধাবী আরিফা আক্তার বরিশাল সরকারী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সরকারী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় বাবা-মা সহ পরিবারের সকলের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ইউনিয়নের হতদরিদ্র ভ্যান চালক শেখ আসাদুজ্জামান ও গৃহিনী হামিমা আক্তার হিমার বড় মেয়ে মেধাবী আরিফা আক্তার। তবে আনন্দের মাঝে অর্থাভাবে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে আরিফার পরিবার।

আরিফার পরিবার জানায়, বাবা-মায়ের চরম দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে উঠা আরিফা আক্তারের। অদম্য মেধার কারণেই পারিবারিক প্রতিকুলতার মধ্যেও পড়াশুনায় সে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে থাকে। ট্যালেন্টপুলে প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি অর্জন করেছে। ছোট বেলা থেকে লেখাপড়ায় প্রচন্ড আগ্রহ ও পিতার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আজ সে সরকারী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

আরিফা পড়া লেখায় ভালো হওয়ায় হতদরিদ্র পিতা প্রতিদিন নিজের ভ্যান চালিয়ে কচুয়া থেকে বাগেরহাট সরকারী বেসরকারী বালিকা বিদ্যালয় নিয়ে আসতেন। ছুটি শেষে আবারো পিতা ভ্যানে বাড়িতে পৌছে দিতেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাবার ভ্যানে আসা যাওয়া করতো আরিফা। প্রচন্ত অর্থ কষ্টের মধ্যে মেয়ের পড়াশুনার জন্য ২ বছর পরে বাগেরহাটে ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নেন তার বাবা। আসাদুজ্জামানের ছোট মেয়েটি ষষ্ঠ শ্রেনীকে পড়ে। প্রচন্ড অর্থকষ্ঠে থাকলেও মা-বাবা তাদের দুই বোনের পড়াশুনা বন্ধ করেননি।

২০২২ সালে বাগেরহাট সরকারী গার্লস বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজে ভর্তি হয় আরিফা। ২০২৪ সালে এইচএসসিতে এ-প্লাস পেয়ে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বরিশাল সরকারী মেডিকেলে ভর্তির চান্স পায়।

ভ্যান চালক পিতা ও মা সেলাই মেশিনের কাজ করে মেয়েকে এ পযন্ত আনতে তাদের ব্যাংক, এনজি ও স্বর্নের জিনিস বন্ধন রেখে দুই লক্ষ টাকার ঋন করতে হয়েছে। এমনিতে লোনের চাপ অন্য দিকে ভর্তির অর্থ যোগান দেওয়া হতদরিদ্র মা-বাবার পক্ষে কোনমতেই সম্ভব নয়। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হওয়ার চেয়ে অর্থাভাবে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে মেধাবী ছাত্রী আরিফা আক্তার।

হতদরিদ্র ভ্যান চালক শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজের নামটাও লেখতে পারি না। যখন আমার এই মেয়ে তার মায়ের গর্ভে তখন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একটা অনুষ্ঠানে যাই

সেখানে সকলের স্বাক্ষর দিতে পারলেও আমি সাক্ষর দিতে পারি নাই। তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখেছি আমার যত কষ্টই হোক না কেন আমি আমার সন্তানকে ডাক্তার বানাবো। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূর্ন করেছে। আমার চাইতে কেউ সুখি মানুষ আর না ‘।

আরিফার মা হামিমা আক্তার হিমা বলেন,‘পড়ার প্রতি মেয়ের প্রচন্ড ঝোঁকের কারণেই অর্থকষ্টের মধ্যেও তার পড়াশুনা বন্ধ করেনি। স্বামীর আয় ও নিজে সেলাই মেশিনের কাজ করে অনেক সময় না খেয়ে থাকলেও কখনো তার পড়ালেখা বন্ধ করেনি। আরিফা ছোট বেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যায়। এখন ভর্তির চান্স পেয়েছে। কিন্তু খুশির মাঝেও ভর্তি ও পড়া লেখা নিয়ে চিন্তিত। দুই লক্ষ টাকা ঋনের চাপ অন্য দিকে ভর্তির অর্থ যোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে কোনমতেই সম্ভব হচ্ছেনা। তাই মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পুরণে সমাজের বিত্তবান ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তার পরিবার।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!