খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ১ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  সম্পূর্ণ নিরাপদ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেছোভূতের কান্না যেন সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চায় নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠার ডাক

পারভেজ মোহাম্মদ

সাবিত সারওয়ার। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্তপ্রাণ এক কবি। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি লেখালেখি করছেন। ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধসহ সাহিত্যের নানা শাখায় তার বিচরণ। দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখছেন তিনি।

পদ্যের মতো গদ্যের গঠনশৈলীতেও একধরনের নিজস্বতা আছে। সরল, সংক্ষিপ্ত এবং ঝরঝরে। গান, ডকুমেন্টরি ও টিভি নাটকের স্ক্রিপ্ট তৈরির চেষ্টা করেন। ব্যক্তি জীবনে খানিকটা অন্তর্মুখী এই লেখক। এ জন্য পেশাগত ব্যস্ততাও কিছুটা দায়ী। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে সংবাদ সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি সংবাদ উপস্থাপক হিসেবেও বেশ পরিচিত। বতর্মানে সংবাদভিত্তিক দেশের প্রথম বিজনেস চ্যানেল- এখন টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ বার্তাকক্ষ সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। দায়িত্ব পালন করছেন ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ হিসেবে। পাশাপাশি সংবাদপাঠও করছেন নিয়মিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন।

কবির জন্ম- খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার রামনগর গ্রামে। জন্মসূত্রে নাম আবদুল মতিন। তবে এই নামে একাধিক লেখকের ফলে একসময় বেশ বিড়ম্বনা তৈরি হয়। বর্তমানে শিল্প-সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় সাবিত সারওয়ার নামেই পরিচিত তিনি। ছড়া, কবিতা ও গল্পসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা-৬।

একুশে বইমেলা-২০২৫ এ প্রকাশিত হয়েছে সাবিত সারওয়ার-এর একমাত্র গল্পের বই ‘মেছো ভূতের কান্না’। এটি মূলত ছোটদের গল্পের বই। গতানুগতিক ভূতের গল্প নয়। বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে লেখা। তবে, বয়ানের ভাঁজে ভাঁজে লেখক খানিকটা কল্পনার রঙ ছিটিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে বৈঠকি ঢঙে জমে ওঠে গল্পের আসর। এক মলাটে ৯টি ভিন্ন স্বাদের গল্পে গল্পকার চেষ্টা করেছেন শিশুকিশোরদের মনন ও বিনোদনের মেলবন্ধন ঘটাতে। প্রায় প্রতিটি গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে শিশুমনের কল্পনা ও কৌতুহল। বিষয়বস্তুতে নজর দেয়া হয়েছে শিক্ষণীয় দিক। যেন মানবিক হতে পারি আমরা। নতুন প্রজন্ম যেন বেড়ে ওঠে সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা নিয়ে।

নাম শিরোনামের গল্প মেছোভূতের কান্নায় গল্পকার তুলে ধরেছেন গ্রামীণ এক গল্পের পটভূমি। ছায়াসুনিবিড় সেই গ্রাম এখন খানিকটা শহরে আদল পেয়েছে। তবুও গল্পের সেই কাল এখনও সমান তালে প্রাসঙ্গিতক। কাহিনি পূর্বের খন্ডচিত্রে দেখানো হয়েছে অখন্ড সেই গ্রামীণ পরিবেশ। যেখানে দবির ও মতি ভাই নামে দুই বন্ধু চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে গল্পটি। প্রতিদিন ভোররাতে নদীতে মাছ শিকারে যান। একদিন ভরা পূর্ণিমায় দবির সেজে মতি ভাইকে শ্মশানঘেঁরা নদীতে ডেকে নেয় মেছোভূত। মতি ভাই বুঝতে পারে না এখনও সকাল হয়নি। বরং দিনভর ক্লান্তির কারণে তার মনে হয় গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন সে। বারবার দবির ডাক শুনে জাল-দড়ি নিয়ে বন্ধু দরিরের পেছন পেছন রওনা হয়। আকাশে তখন খন্ড মেঘের ওড়াউড়ি। কাঁচা জোছনার আলোয় পথঘাট স্পষ্ট দেখা যায়। দীর্ঘ পথ নানা গল্পগুজব। সেই তড়িৎ পায়ে গন্তব্যে যাত্রা। তবে সব কথাই মতি ভাইয়ের। দবির সমস্ত পথ নিশ্চুপ। একই সঙ্গে কোনোভাবেই তার নাগাল পায় না মতি ভাই। একপর্যায়ে পৌছেঁ যায় সালতা নদীর বাঁকে। শ্মশান ঘাটের পাশে ঝপ ঝপ করে দ্রুত জাল ছোড়ে দবির। জাল ভরে মাছ ওঠার শব্দ শোনে মতি ভাই। অথচ মতি ভাইয়ের মাছশূন্য জাল। কৌতুহল বেড়ে যায় তার। হঠাৎ দ্রুত পায়ে দবিরের আরও কাছাকাছি চলে যায়। দেখে এক অবাক কান্ড। দরিব জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে পাত্রে না রেখে মুখে ভরছে। কাঁচামাছ চিবিয়ে কসমস করে গিলছে। দেখেই বেহুশ হয়ে পড়ে মতি ভাই। এরপর শুরু হয় মেছোভূত ও মতি ভাইয়ের সংলাপ। চলে দীর্ঘ সময় একে অপরকে পরাস্ত করার কসরত। পুরো গল্প পড়লে যেকোনো বয়সী পাঠকই নতুন এক স্বাদ অনুভব করতে পারবেন।

এছাড়াও, মৃত্যুপুরী, সালমান ও সায়মার গল্প, কালরাতে ফুলপরি এসেছিল, দুষ্টু ইঁদুরের কান্ড, একজন বাবার অভাবে এবং থ্যাংক ইউ মিসসহ চমৎকার ৯টি গল্পে রচিত ‘মেছো ভূতের কান্না’। যেখানে শুধু বিনোদন নয়- বরং মনন ও বিনোদনের সমন্বয়ে শিশুকিশোরদের মানসিক বিকাশ তৈরির রসদ রয়েছে।৪ কালারের প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয় প্রকাশনী। মেলার ১৬ নম্বর প্যাভিলিয়নসহ দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনেও বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

খুলনা গেজেট/পারভেজ/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!