আমাদের তেলিগাতী অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল গ্রুপ নামে একটি সামাজিক সংগঠন ব্যতিক্রমধর্মী একটি কাজের মাধ্যমে এলাকায় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। সংগঠনটি মৃত ব্যক্তিকে (মুর্দার) গোসলের সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি শুক্রবার (১১ আগস্ট) খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতি পাকার মাথায় ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যতিক্রমধর্মী এ ক্যাম্পেইনের যাত্রা শুরু করে।
মৃত নারী (মুর্দ্দার)কে গোসলের সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতির প্রশিক্ষণ প্রদান করেন আম্বিয়া বেগম ও তার মুর্দার গোসল করানোর টিম। প্রথম প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেইনে মোট ৩০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তি ক্যাম্পেইন পুরুষদের তেলিগাতী খানাবাড়ী ঈদগাহ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেইনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন তেলিগাতী ফেসবুক অফিসিয়াল পেজ ও youtube চ্যানেলের উদ্যোক্তা ও বার্তা প্রধান মোঃ সুজন পরশ। সংগঠন গ্রাম ভিত্তিক গ্রামের অসহায়, দরিদ্র এবং প্রতিবন্ধীদের নানা ধরনের সহযোগিতা করে থাকে। গত ঈদের পূর্বে সংগঠনটি তাদের সংগঠনের ব্যানারে তৈরি টি শার্ট বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে গ্রামের ১০ জন অসহায় মানুষকে ঈদের কাপড় এবং দুইজন প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার ক্রয় করে দেয়। এছাড়া সংগঠনটি নিজেদের অর্থায়নে প্রতিবছর গ্রামের ছোট বাচ্চা এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের ফুটবল বিতরণ করে থাকে।
তাদের এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ সম্পর্কে মোঃ সুজন পরশ খুলনা গেজেটকে বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমাদের এলাকার এক মহিলা মারা যান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক হিসেবে আমার কাছে ফোন আসে মহিলাটির গোসল এবং দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। গোসল এবং দাফন করার জন্য আমাদের রয়েছে ৫ সদস্যের একটি মহিলা স্বেচ্ছাসেবী টিম। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওইদিন টিমের দুইজন সদস্য খুলনার বাইরে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। একজন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। বাকি দুইজন সদস্য টিমের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। গোসল করাতে তারা ২ জন খুব বেশি পারদর্শী ছিলেন না। এ ঘটনার পরবর্তীতে আমাদের তেলিগাতী অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ এবং youtube চ্যানেল গ্রুপের উদ্যোগে আমরা সিদ্ধান্ত নিই একটা টিমের উপর নির্ভর না করে আমরা একাধিক টিম তৈরি করবো। এই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রথমে আমরা যোগীপোল ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের যে টিম আছে সেই টিমের সদস্যদের দিয়ে গতকাল শুক্রবার আমরা ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্য থেকে ৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা স্বেচ্ছায় আমাদের এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে রাজি হয়েছে। আমাদের ইচ্ছা পরবর্তীতে ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে এবং সর্বশেষ দেশব্যাপী এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করার।
কোনও মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর মৃতের গোসল, কাফন জানাজা বহন ও দাফন করার আবশ্যক হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দ্রুতই এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। হাদিস শরীফে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন, হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না ৩. কোন অবিবাহিত মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তালে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না (তিরমিজি ১/২০৬)।
কেউ মারা গেলে তার দাফন-কাফন ও গোসল করানো শুধু অপর মুসলমানের দায়িত্ব নয় বরং এ কাজে অংশ নিলে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে (মৃত ব্যক্তিকে) গোসল দেবে এবং তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ চল্লিশবার তার গুনাহ মাফ করবেন। আর যে ব্যক্তি কবর খনন করবে এবং তাকে কবরে রাখবে আল্লাহ তাকে কেয়ামত পর্যন্ত তার বাসস্থানের ব্যবস্থা করার সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কাফনের ব্যবস্থা করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে মিহি ও পুরু রেশমের কাপড় পরাবেন। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী: ৬৬৫৫; মুসতাদরাকে হাকেম: ১৩৪০)
খুলনা গেজেট/এনএম