আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আবার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
খাদ্য উপকরণের মধ্যে বিশেষ করে চাল ও জ্বালানির দাম বিশ্ববাজারে আবার বাড়তে শুরু করেছে। এ দুটি উপকরণ থেকে আবার মূল্যস্ফীতির হার উসকে যেতে পারে। জ্বালানি উপকরণের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতিতে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে। এ কারণে খাদ্য পরিবহণ, স্থানান্তরের খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে প্রক্রিয়াকরণের খরচও বৃদ্ধি পাবে।
এর প্রভাবে জাহাজ ভাড়াও বৃদ্ধি পাবে। যা মূল্যস্ফীতির হারকে ঊর্ধ্বমুখী করতে পারে।
বুধবার রাতে প্রকাশিত আইএমএফের ‘রিজিওনাল ইকনোমিক আউটলুক এশিয়া ও প্যাসিফিক, অক্টোবর ২০২৩ বা আঞ্চলিক অর্থনীতির পূর্বাভাস এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল, অক্টোবর ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কার কথা বলেছে আইএমএফ।
প্রতিবেদনে আগামীতে অর্থনীতিতে কি ধরনের ঝুঁকি আসতে পারে সেগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি ঝুঁকিগুলো আলাদাভাবে শনাক্ত করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার অনেক দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাংলাদেশ ও জাপানে এ হার বাড়ছে। এশিয়ার বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ চীনে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে আগামীতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। ফলে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য রয়েছে এমন সব দেশে মূল্যস্ফীতির হার সংক্রমিত হতে পারে।
বাংলাদেশ চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। সে হিসাবে বাংলাদেশও চীনের মূল্যস্ফীতির দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশে শীতে সাধারণত পণ্যের উৎপাদন বেশি হয়। ফলে সরবরাহ বাড়ে। এতে দামও কিছুটা কমে। এর প্রভাবে আগামী শীতে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমতে পারে।
এর আগে আইএমএফের প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার আগামীতে কমে আসবে।
রোববার মরক্কোতে আইএমএফের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এ নীতি অনুসরণের ফলে একদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাবে। প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হবে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়বে না। যা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অর্থনীতিকে বড় ধরনের চ্যাালেঞ্জে ফেলবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন কম হওয়ায় অনেক দেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে বিশ্ববাজারে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আমদানিকারক দেশগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাবে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাবে। ব্যবসার স্বাভাবিকতা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাবে। বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হবে। এতে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাতে সম্পদের মান কমে যাবে। যা এ খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। ইতোমধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাতে এ ধরনের ঝুঁকি এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বড় ঝুঁকি হতে পারে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপালের প্রবৃদ্ধি মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ইতোমধ্যেই ৫ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। এশিয়ার ছোট ও দুর্বল দেশগুলোতে ঋণ সংকট বাড়তে পারে। এতে ঋণের জোগান কমে যাবে। ফলে ঋণ সংকট বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া নেপাল, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডে অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি একই ধরনের। এসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার বিপরীতে আয় বেড়েছে। এছাড়া সরকারগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যয় বাড়িয়েছে।
শ্রীলংকা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠতে শুরু করেছে। দেশটিতে পণ্যমূল্য কিছুটা কমেছে, ফলে মূল্যস্ফীতির হারও কমতে শুরু করেছে। পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দেশটি ডলার সংকটও কাটিয়ে ওঠতে শুরু করেছে।
চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশে হাউজিং খাতে মন্দার আশঙ্কা করছে আইএমএফ। ওইসব দেশে এ খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। বেচাকেনায়ও মন্দা। ফলে এ মন্দা আশপাশের দেশগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে।
খিুলনা গেজেট/কেডি