শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান। সেই ধাক্কা সামলে দলকে চালকের আসনে নিয়ে যান তামিম-শান্ত। প্রথম সেশনে সাইফের উইকেট ছাড়া আর কোনো বিপদ ঘটেনি। বাংলাদেশ তোলে ২৭ ওভারে ১০৬ রান। দ্বিতীয় সেশনেও দারুণ খেলছিলেন সফরকারীরা। কিন্তু নার্ভাস নাইন্টিজে সাজঘরে ফেরেন তামিম। এরপর খেলার হাল ধরেন শান্ত-মুমিনুল। দুজন দেড়শ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে দিন পার করে আসেন।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে আন্তঃস্কোয়াড প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। যেখানে ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমদিন শেষে শান্ত জানিয়েছিলেন, টেস্টে ভালো করতে ধৈর্য ধরতে হবে। লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমে নিজের কথার প্রমাণ করতেই যেন শান্তর ধীরগতির ব্যাটিং।
১২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ২৩৫ বলে ছুঁয়েছেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। শান্তর এমন সেঞ্চুরির দিনে অবশ্য আক্ষেপে পুড়েছেন তামিম ইকবাল। মাত্র ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এই দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল হক। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩০২ রান। শান্ত অপরাজিত রয়েছেন ১২৬ রানে আর মুমিনুল অপরাজিত ৬৪ রান করে।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান। বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন কোনো রান না করা সাইফ। তবে তিনে নামা শান্তকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন তামিম।
এই জুটি গড়ার পথে মাত্র ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। টেস্টে এটি তাঁর ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি। এই ইনিংস খেলার পথে ১১টি বাউন্ডারি মেরেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন বাঁহাতি এই ওপেনার। যা হাফ সেঞ্চুরির পরও অব্যাহত ছিল।
এই দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রথম সেশনে আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি বাংলাদেশকে। ফলে ১ উইকেটে ১০৬ রান করে প্রথম সেশন শেষ করে টাইগাররা। এই সেশনে তাঁদের দুজনের ব্যাট থেকে আসে ৯৮ রান। মধ্য বিরতি থেকে ফিরে ১২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত।
টেস্ট ক্রিকেটে এটি তাঁর দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। বিশ্ব ফার্নান্দোকে থার্ড ম্যান দিয়ে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তামিম-শান্তর ব্যাটে যখন বড় সংগ্রহের পথে হাঁটছিল বাংলাদেশ তখনই টাইগার শিবিরে আঘাত হানেন ফার্নান্দো। বাঁহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা লাহিরু থিরামান্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৯০ রানে আউট হয়েছেন তামিম।
ইনিংসটি খেলতে ১৫টি চার মেরেছেন তিনি। তামিমের বিদায়ে ভাঙে তাঁদের দুজনের ১৪৪ রানের জুটি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ৯০ রানের ঘরে আউট হয়েছেন তিনি। এর আগে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানে আউট হয়েছিলেন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনার বিদায় নিলেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শান্ত ও মুমিনুল হক।
১০ রানের জন্য তামিম সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেও নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি শান্ত। প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে এসে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে চার মেরে ২৩৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এদিকে বিদেশের মাটিতে হাফ সেঞ্চুরির খরা কাটিয়েছেন মুমিনুল। ঘরের মাঠে যতটা উজ্জ্বল বিদেশের মাটিতে ঠিক ততই বিবর্ণ মুমিনুলের পারফরম্যান্স।
দীর্ঘদিন পর এসে বিদেশের মাটিতে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এই টেস্ট অধিনায়ক। ধনাঞ্জয়ার বলে এক রান নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পচেস্ট্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল। এদিকে লঙ্কানদের হয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন ফার্নান্দো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ (প্রথম দিন শেষে): ৩০২/২ (ওভার ৯০) (শান্ত ১২৬*, তামিম ৯০, মুমিনুল ৬৪*, ফার্নান্দো ২/৬১)