রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গতকাল শনিবার রাতে সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে কিছু লোক ঘেরাও করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, সাংবাদিক মুন্নী সাহা রাত ১০টার দিকে কারওয়ানবাজারের জনতা টাওয়ারের অফিস থেকে বের হওয়ার পর কিছু ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে ধরেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুন্নী সাহাকে নিয়ে যাওয়ার পর শতাধিক ব্যক্তি তাঁর ‘বিচারের’ দাবিতে স্লোগান দেন।
পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুন্নী সাহাকে থানা থেকে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, মুন্নী সাহাকে আটক করা হয়নি। কারওয়ান বাজারে লোকজন তাঁকে ঘেরাও করেছিল। তখন তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে ডিবিতে আনা হয়। যেহেতু তাঁর নামে চারটি মামলা আছে, সেগুলোতে জামিনের শর্তে তাঁকে পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর কাওরান বাজারে এক টাকার খবরের অফিস থেকে বের হয়ে সবজি কিনতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে পড়েন সাংবাদিক মুন্নী সাহা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে হেফাজতে নেয় তেজগাঁও থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য, টেলিভিশন সাংবাদিক ও টক শো সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত মুখ মুন্নী সাহার সাংবাদিকতা শুরু আজকের কাগজ দিয়ে। সেখান থেকে ভোরের কাগজে দীর্ঘসময় কাজ করার পর তিনি যান একুশে টেলিভিশনে। এরপর যোগ দেন এটিএন বাংলায়।
এটিএন নিউজের শুরু থেকে মুন্নী সাহা এ টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে ২০২৩ সালের ৩১ মে তিনি এটিএন নিউজ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ‘এক টাকার খবর’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহতের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ওই মামলা করেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. কামরুল ইসলাম।
সেই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সদস্য এবং পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে সাত সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, তাদের একজন মুন্নী সাহা।
এদিকে, সাংবাদিক মুন্নী সাহার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত ৬ অক্টোবর দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থার ওই চিঠি পৌঁছায়।
চিঠিতে বলা হয়, আপনাদের ব্যাংকে মুন্নী সাহা এবং তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো আমানত, ঋণ, লকার, ক্রেডিট কার্ড, ফরেন ট্রেড, অফশোর ব্যাংকিং হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেনের তথ্য ৭ অক্টোবরের মধ্যে বিএফআইইউকে পাঠাতে হবে।
এ ছাড়া হিসাব খোলার ফরম, টিপি, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী ও অন্যান্য দলিলাদির তথ্য বিএফআইইউকে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।
খুলনা গেজেট/এইচ