তরতাজা যুবক আজমল হক খান। সাতক্ষীরা শহরে তার বেড়ে ওঠা। মার্কসবাদী দর্শণে বিশ্বাসী ছিলেন। স্বাধীনতা চেয়েছিলেন মনে প্রাণে। তবে সে চাওয়াটি ছিল ভিন্নরুপের। শাসন শোষনের অবসান চেয়েছেন, মহাজন চাষীদের অত্যাচারের অবসান চেয়েছেন। স্বাধীনতা চেয়েছেন সমাজ পরিবর্তনের জন্য। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এ স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। মানুষ রাজনৈতিক অধিকার পাবে। অন্ন বস্ত্রের সংকট থাকবেনা।
তিনি জন্মেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাশিরহাট মহাকুমার চন্ডিপুর গ্রামে। ৪৭ সালের পর তার পরিবার সাতক্ষীরা মহাকুমা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এ পরিবারের পরবর্তী আবাসস্থল সাতক্ষীরা শহরের মুনজিৎপুর একাডেমী মসজিদের বিপরীতে। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল) এর সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি সে সময়ে কমিউনিষ্ট আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ। বামপন্থিদের মুখপাত্র সাপ্তাহিক গণশক্তির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি তার সম্পাদনায় অন্যন্য স্বদেশ নামে দেশাত্মাবোধক কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। স্বদেশ সাহিত্য আন্দোলনে ঢেউ সৃষ্টি করে। অর্থ সংকটে পড়লে রক্ত বিক্রি করে পত্রিকা প্রকাশনা অব্যহত রাখেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল) এর খুলনা জেলা শাখার রণকৌশলগত প্রশ্নে কেন্দ্রের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেন। এ অঞ্চলের কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যর সশ্রস্ত্র যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ‘ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ পূর্ব বাংলা থেকে হাত গুটাও’ শিরোনামে লিফলেট বিলি করতে গিয়ে তিনি গোয়েন্দা নজরে পড়েন। ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই লবসা ইউনিয়নের থানাঘাটা গ্রামের নজির হোসেন খান চৌধুরী টুটুলের বাসা থেকে পকিস্তান বাহিনী ও রাজাকাররা তাকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন সাতক্ষীরা ট্রেজারী অফিসের সামনে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী তার ওপর অত্যাচার চালায়। একপর্যায়ে তাকে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়। সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্র্রশাসক মো: কাতেবুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী আজমল হোসেনকে পাক বাহিনী যশোর সেনানিবাসে তাকে হত্যা করে।
রাজনৈতিক সতীর্থ ও পরিবারের সদস্যরা তার লাশের সন্ধান পায়নি। (তথ্যসূত্র : ঈক্ষণ নামক সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা, জুলাই ২০১৯ ও সাতক্ষীরা জেলা ওর্য়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলুর সাক্ষাৎকার)
খুলনা গেজেট/এনএম