জন্ম গ্রহণ করলে মৃত্যু অনিবার্য। তবুও কিছু কিছু মৃত্যু মানুষকে নাড়া দিয়ে যায়। করে দেয় শোকে পাথর। যিনি চলে যান তিনি তার কর্মের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকেন। এমন একজন সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। একটু দেরিতে যখন খবর পেলাম তখন কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। বছরের শেষ সময় এসে সংবাদপত্র তথা মিডিয়া জগতের আর এক বাতিঘরকে হারালাম। আমরা আমাদের মিডিয়া জগতের একজন শিক্ষক ও অভিভাবককে হারালাম। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাস লিখতে হলে রিয়াজ ভাইয়ের নাম আসবে অনেকের আগে।
রিয়াজ ভাইয়ের নাম বললে যারা মিডিয়া জগতের খবর রাখেন তাদের কাছে নতুন করে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। রিয়াজ ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি কখনো রেগে যেতেন না এবং খুব আস্তে আস্তে কথা বলতেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন করার সুবাদে আশির দশক থেকে রিয়াজ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়ের সুযোগ হয়। তখন থেকে আমি কখনো তাকে রেগে বা উচ্চ কন্ঠে কথা বলতে দেখি নাই। তার কথার মধ্যে যুক্তি প্রাধান্য পেত। অল্পতেই মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন। চিরজীবন অন্যায়ের কাছে আপোষ করেননি। তার রাজনৈতিক একটি আদর্শ থাকলেও তিনি যখন কলম নিয়ে বসতেন তখন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। রিয়াজ ভাই দু’টি কথা প্রায়ই বলতেন।
এক. রাজনীতি ও সাংবাদিকতাকে এক করে ফেলা যাবে না। যখন তুমি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছো তখন তোমার জনগণ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেছে। তোমার দুই চোখ দিয়ে সমান দেখতে হবে। কম বা বেশি নয়। আর দুই হলো, কোন মিডিয়ায় দুই কলম না লিখে নেতা হওয়া যায়, পদ পদবি পাওয়া যায়, গাড়ি বাড়িতে সাইনবোর্ড দেয়া যায়। তবে সাংবাদিক হওয়া যায় না। সাংবাদিক হতে হলে লিখতে হবে, পড়তে হবে এবং জানতে হবে। জানার কোন শেষ থাকবে না। রিয়াজ ভাইকে হারিয়ে এই কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে।
রিয়াজ ভাই খুব ভালো ইংরেজি জানতেন, তাই তিনি দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ অবজারভার, ডেইলি স্টার, ডেইলি টেলিগ্রাফ, ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস, নিউজ টুডে সহ বেশ কয়েকটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি তার যোগ্যতার বলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, অবিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একুশের পদক পেয়েছিলেন।
অসময়ে তিনি আমাদের মধ্যে থেকে চলে গেলেন। আজ তাকে খুব প্রয়োজন ছিল আমাদের। জানিনা তার শূন্যতা কিভাবে পুরণ হবে। আল্লাহ রিয়াজ ভাইকে জান্নাতবাসী করুন। লেখক : খুলনা প্রতিনিধি, ইউএনবি।
খুলনা গেজেট/এনএম