মিয়ানমারে বেসামরিক প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে পৃথক সংঘর্ষে গত ১০ দিনে অন্তত ৯০ জন জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। দেশটির স্যাগাইন, মাগে অঞ্চল এবং কায়াহ প্রদেশে এসব সংঘর্ষ হয়।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই ও রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং সোমবার (১১ অক্টোবর) মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বুধবার মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গ্রুপ পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে এএনআই ও রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, সোমবার (১১ অক্টোবর) মান্দালাই শহরের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত স্যাগাইন অঞ্চলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করে। এ সময় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ জন বার্মিজ সেনা নিহত হয়েছেন।
১১ অক্টোবর মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি জানায়, ১০ অক্টোবর স্যাগাইনে প্রায় ছয় জন জান্তা সেনা নিহত হন। প্যাল পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) মোটরসাইকেল ও এক্সপ্রেস বাসে ঘুরতে থাকা জান্তা সেনাদের ওপর হামলা করলে এই ছয় সেনা নিহত হন। পিডিএফ জানিয়েছে, জান্তা সেনাদের বহনকারী এক্সপ্রেস বাসটি মাইন বিস্ফোরণে উল্টে যায়। একটি পুলিশের গাড়িতে হামলা করলে আরও ১২ জন জান্তা সেনা নিহত হন।
এদিকে ১০ অক্টোবর সকালে স্যাগাইনের টাজ টাউনশিপ এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী একদল জান্তা সেনার ওপর হামলা চালায় তাজ পিপল কমরেডস (টিপিসি)। এতে দুই জন জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে টিপিসি।
৯ অক্টোবর সকালে স্যাগাইন অঞ্চলের মিয়াং টাউনশিপের কিউক ইয়িট গ্রামে স্থানীয় ১০টি প্রতিরোধ দল সমন্বিতভাবে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ১৫ জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া পৃথক ঘটনায় জান্তা বাহিনীর দুটি সামরিক যানে হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সিভিলিয়ান ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন অফ মিয়াং (সিডিএসওএম)।
এদিকে, ম্যাগওয়ে অঞ্চলের ইয়েসাগিও টাউনশিপ থেকে স্যাগাইন অঞ্চলের মিয়াং টাউনশিপে সেনা বহনকারী গাড়িতে পিডিএফ স্থলমাইন হামলা চালায়। এ হামলায় হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে মাগে অঞ্চলে ইয়াও ডিফেন্স ফোর্সের (ওয়াইডিএফ) সঙ্গে ১১ ঘণ্টার লড়াইয়ে ২০ জন জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন বলে ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত এবং ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা চলছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)-র তথ্য অনুযায়ী, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তা সরকারের হাতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১৬৭ জন নিহত হয়েছেন এবং ৭ হাজার ২০০-র বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সংঘর্ষও সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এএপিপি’র তথ্য অনুযায়ী, কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই উভয়পক্ষের মধ্যে ১৩২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। রক্তপাতহীন এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বর্তমানে গৃহবন্দি বা কারাবন্দি অবস্থায় আছেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই