খুলনার পাইকারী চালের মোকামগুলোতে থরে থরে সাজানো রয়েছে নামীদামি বিভিন্ন কোম্পানীর চালের বস্তা। কোনটি নাজিরশাইল আবার কোনটি মিনিকেট আবার কোনটি কাজললতা। কিন্তু পাইকারী মোকামগুলোর কোন মালিক জানে না এ চালগুলো কোন ধান থেকে উৎপাদন করা হয়। নাজিরশাইল নামে আমাদের দেশে ধানের কোন জাত নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তবে খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে উত্তরবঙ্গে ‘নাইজার শাইল’ ধানের অস্তিত্ব আছে।
খুলনায় চালের পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত এক বছরের বেশী সময় ধরে বাজারে নাজিরশাইল চালের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছে। মূলত ঢাকা ও চট্রগ্রামের মানুষ খায় বেশী। উত্তরবঙ্গে সরু পায়জাম ও শম্পা নামে দু’জাতের ধান হয়। এ ধান থেকে যে চাল উৎপাদন করা হয় সেখানকার মিল মালিকরা নাজিরশাইল বলে চালিয়ে দেয়। তবে সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি কোন ধান থেকে এ চালটি তৈরি করা হয়।
খুলনায় ধান ব্যবসায়ী গোপাল সাহা বলেন, নাজিরশাইল নামক চাল উত্তরবঙ্গ থেকে আসে। নাজিরশাইল নামে কোন ধানের অস্তিত্ব আমাদের দেশে নাই। দেশে নতুন নতুন ধানের উদ্ভাবন হচ্ছে। ইরি জাতীয় ধান থেকে নাজিরশাইল নামে চাল উৎপাদন করা হয়। মূলত মিল মালিকরা ইরি জাতীয় ধানকে কেটে চিকন ও সাদা করে নাজিরশাইল নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। আর ক্রেতারা তা কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।
বড় বাজারের মা লক্ষী ভান্ডারের কর্ণধর বিদ্যুৎ দাস বলেন, ইরি ১ থেকে ৯৯ জাতের ধান পাওয়া যায়। চিকন হলে মিনিকেট ও নাজিরশাইল ধান বলে চালনো হয়। উত্তরবঙ্গে পায়জাম ও শম্পা নামে দু’টি সরু ধান উৎপাদিত হয়। মিল মালিকরা এ ধান দু’টিকে এক সিদ্ধ দিয়ে ভাঙ্গিয়ে নাজিরশাইল নামে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করেন। তিনি আরও বলেন, নাজিরশাইল খুলনার স্থানীয় মানুষ বেশী কেনে না, ঢাকা- চট্রগ্রামে চলে বেশী। ওইসব এলাকার যে সব মানুষ খুলনায় আসে তারা সবচেয়ে বেশী কিনতে আসে।
বড় বাজারের অপর ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, নাজিরশাইল ধানের কোন জাত আমাদের দেশে নেই। চালটি শেরপুর ও নওগার দিকে বেশী পাওয়া যায়। পায়জাম ও শম্পা ধান থেকে উৎপাদিত চালকে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা নাজিরশাইল সমগ্র দেশে চালিয়ে দিচ্ছে।
নাটোরের চালের ব্যাপারী মো: ইউনুস আলী পিন্টু বলেন, মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজললতা প্রভৃতি নামে যেসব চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা একই জাতের ধান থেকে তৈরি। তবে কোন জাত থেকে তৈরি হয় তা তিনি বলতে পারেননি। এসব নামে ধানের কোনো জাত নেই বাস্তবে। ‘নাইজার শাইল’ নামে এক ধরনের ধান স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হলেও তা পরিমাণে খুবই কম, যা বাজারে মেলে-না সচরাচর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো: হাফিজুর রহমান বলেন, উত্তর বঙ্গে ‘নাইজার শাইল’ জাতের ধান পাওয়া যায়। ওই ধান থেকে যে চাল উৎপাদন হয় তাকে ‘নাইজার শাইল’ চাল বলা হয়। সেটি নাজিরশাইল কি না তা পরিস্কার করে বলতে পারেনি তিনি।
গতবছর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামে চাল বিক্রি হলেও এই নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই। মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের চাল সরু করে এসব নামে বিক্রি করা হয়।