রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকানোর প্রস্তুতি হিসেবে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের মিত্র দেশগুলোতে সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়নোর পরিকল্পনা নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)।
ন্যাটোর মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া জোটের সহযোগী দেশ ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন ছাড়াও যে কোনো প্রকার হামলা রাশিয়া চালাতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সম্প্রতি ন্যাটোতে ১ হাজার সেনা সদস্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সেনারা সবাই মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্ট্রাইকার স্কোয়াড্রনের সদস্য।
নতুন এই মার্কিন সেনাদের পূর্ব ইউরোপের দেশ ও ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্র রোমানিয়ার পূর্বাঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান নিতে বলেছে ন্যাটো।
শুক্রবার রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ওয়ার্নার ইউহানিসের সঙ্গে ওই সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনে যান ন্যাটোর মহাসচিব। সেখানে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পূর্ব ইউরোপের মিত্র দেশসমূহে ন্যাটোকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবেই নতুন মার্কিন সৈন্যদল এই অবস্থান করবে।’
‘ন্যাটো সবসময় মিত্রদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটতে পারে এই অঞ্চলে। ন্যাটোর সেনাবাহিনীকে সে রকম নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এই মার্কিন সেনারা এই ঘাঁটিতে অবস্থান করলেও প্রয়োজনে কৃষ্ণ সাগর এলাকার যে কোনো স্থানে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আঘাত হানতে পারবে।’
কৃষ্ণ সাগর উপকূলের দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এই অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিল ন্যাটো। শুক্রবার স্টলটেনবার্গ বলেন, ইউক্রেনে যে কোনোভাবেই আসতে পারে রুশ হামলা।
এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘ইউক্রেন এখন রুশ হামলার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। দেশটিতে পুরোদস্তুর আগ্রাসনের শঙ্কা যেমন আছে, তেমনি কিয়েভে (ইউক্রেনের রাজধানী) ক্ষমতাসীন সরকার পতনের পদক্ষেপ, হাইব্রিড সাইবার অ্যাটাকসহ অন্যান্য হামলার ঝুঁকিও রয়েছে।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।
১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।
একসময়ের সোভিয়েত অঙ্গরাষ্ট্র ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রুশ বংশোদ্ভুত। দেশটিতে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীও বেশ সক্রিয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই