২০১৬ সালে স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। এবার নিজের করা মামলায় নিজে গ্রেপ্তার হলে তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার গ্রেপ্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দুপুর ১২টায় শুনানি শেষে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আবদুল হালিমের আদালত এ আদেশ দেয়।
বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মহানগর কোর্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবছার উদ্দিন রুবেল।
গত ৩০ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘স্ত্রী হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারের নিজের করা মামলায় এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আমরা গ্রেপ্তার আবেদনের বিপক্ষে ছিলাম।’
কেন বিরোধিতা করেছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আগের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তাই নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানোর সুযোগ নেই। এমন হলে তার প্রতি অন্যায় হবে। এরপরেও আদালত গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করে। আমরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।’
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য বাবুলকে দায়ী করে আসছিলেন।
শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। তবে কিছু দিনের মধ্যে বদলে যেতে থাকে এই চিত্র। মিতু হত্যার প্রায় তিন সপ্তাহ পর ২০১৬ সালের ২৪ জুন খিলগাঁওয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আকতারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপরেই ছড়িয়ে পড়ে, বাবুলকে পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
এর দেড় মাস পর বাবুল আকতার ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর মিতুর বাবা-মাও তার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে শুরু করেন। তবে এ বিষয়ে পুলিশ ছিল প্রায় নিশ্চুপ। এরপর আদালতের নির্দেশনায় গত বছর এ মামলার দায়িত্ব ডিবির কাছ থেকে বুঝে নেয় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় দেড় বছরের চেষ্টায় নতুন ক্লু পেয়ে মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় পিবিআই। ২০২১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাবুলকে গ্রেপ্তারের আবেদন করেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় নতুন করে হত্যা মামলা করেন তিনি। এই মামলাতেই গত ১১ মে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।