মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি মাহী বি. চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে তার ৩০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুসন্ধানের পর মাহীর অবৈধ সম্পদ থাকার প্রমাণ পায় দুদক। অনুসন্ধানে দেশে মাহীর ৩৯ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদের হদিস পেয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে তিনটি গাড়িও তার মালিকানায় রয়েছে বলে সে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
এ জন্য গত ৮ই অক্টোবর সম্পদের বিবরণী চেয়ে মাহীকে নোটিশও জারি করে সংস্থাটি। সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার ঠিকানায় পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, দুদক আইন-২০০৪ এর ধারা ২৬-এর উপধারা (১) অর্পিত ক্ষমতাবলে তাদের নিজের এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইনের ২৬ (২) উপধারায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র আরো জানায়, গত বছরই দুদক মাহী বি. চৌধুরীর বিদেশে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগটি অনুসন্ধান করে আসছে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের এই এমপি ও তার স্ত্রী আশফা হক লোপার ব্যাংক হিসাব তলব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠিও পাঠায়। গত বছরের ১৩ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটিতে চিঠি পাঠায় দুদক। ওই চিঠিতে মাহী বি. চৌধুরী ও তার স্ত্রী বিভিন্ন ব্যাংকে কি পরিমাণ টাকা জমা করেছেন ও কারা কারা তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করেছেন ও উত্তোলন করেছেন সেসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এদিকে বিদেশে এখন পর্যন্ত মাহী বি. চৌধুরী কি পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন সে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। একই সঙ্গে তার দেশের বাইরে বাড়ি-গাড়িসহ সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টিও তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
গত বছরের ৭ই আগস্ট আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে সস্ত্রীক মাহী বি. চৌধুরীকে তলব করে দুদক। এর পর সময় আবেদন করে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে ২৫শে আগস্ট সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে হাজির হন বিকল্প ধারার এই যুগ্ম মহাসচিব।
এদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, এখানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুযোগ নেই, মানি লন্ডারিংয়েরও সুযোগ নেই। দেশের বাইরে যদি কোনো আয় ও ব্যয় থেকে থাকে তা দেশের বাইরের বৈধ আয় থেকেই হয়েছে। তিনি বলেন, একটি অভিযোগ এসেছে আমার নামে, সেই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করছে দুদক। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য আমার বক্তব্য নেয়া প্রয়োজন ছিল। সেই জন্য দুদক আমাকে ডেকেছে, আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি। মাহী বি. চৌধুরী আরো বলেন, কিছু লোক তো আছেই যাদের আর কোনো রাজনীতি থাকে না। যাদের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান থাকে না, দেশকে দেয়ার মতো রাজনীতিও থাকে না। তারা শুধু ষড়যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। এটা তাদেরই ষড়যন্ত্র।
প্রসঙ্গত, এমপি মাহী বি. চৌধুরী বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ভোটে অংশ নেন মাহী বি. চৌধুরী। তবে নিজ দলীয় প্রতীক কুলা নিয়ে নয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন মাহী। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় তখনই। কারণ নির্বাচনের আগে মাহী বি. চৌধুরীর বাবা ডা. বি. চৌধুরী মাহমুদুর রহমান মান্না, আসম আব্দুর রবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে যুক্তফ্রন্ট করেছিলেন। যার অবস্থান ছিল তৎকালীন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এমন কী সে সময় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বিভিন্ন সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন বি. চৌধুরী। পরবর্তীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হলেও অজানা কারণে বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা তাতে যোগ দেয়নি। সে সময়ই গুঞ্জন ওঠে বিকল্প ধারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনের প্রাক্কালে বিকল্প ধারাও ভেঙে যায়। দলটির একাধিক নেতাকর্মী বি. চৌধুরী থেকে সরে আসেন। খবর-মানবজমিন
খুলনা গেজেট /এমএম