নাজমুল হাসান পাপনকে মন্ত্রী তালিকায় রাখার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের মধ্য থেকে একজন হচ্ছেন বিসিবি সভাপতি। পাপন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার পর এ আলোচনায় জোর হাওয়া লাগে। কিন্তু উৎসুক এই ক্রিকেট অনুসারীদের জন্য হতাশার খবর হলো মাশরাফি-সাকিবের কেউই বিসিবি সভাপতি হতে পারছেন না, পাপন বোর্ড সভাপতির পদ ছেড়ে দিলেও না।
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এ দু’জনকে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে হবে বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আইসিসির সভাপতি হওয়ায় ২০১২ সালে পাপনকে অন্তর্বর্তীকালীন বিসিবি সভাপতি করা হয়। ২০১৩ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে চার বছর মেয়াদে সভাপতি হন তিনি। ২০২১ সালের অক্টোবরে তৃতীয় মেয়াদে বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কমিটির মেয়াদপূর্ণ হবে ২০২৫ সালের অক্টোবরে। তিনি চাইলে এ সময় পর্যন্ত বোর্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। পদত্যাগ করলে বর্তমান কমিটি থেকে যে কোনো একজনকে সভাপতি নির্বাচিত করবে পরিচালনা পর্ষদ।
এ ব্যাপারে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র আইসিসির গাইডলাইন অনুসরণ করে করা। সেখানে সভাপতি পদ নির্বাচিত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতিকে পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। আর পরিচালক হওয়ার জন্য জেনারেল কাউন্সিলর হতে হবে আগে। ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে সভাপতি হতে হবে। এখানে হঠাৎ করে কারও আসার সুযোগ নেই।’
সরকার চাইলেও বিসিবির বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করতে পারবে না। তেমন কিছু করা হলে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়বে বিসিবি। ক্রীড়ানুরাগী সরকার তেমন কোনো ঝুঁকি নেবে না।
বিসিবির সিইওর মতে, ‘বর্তমান কমিটিতে নতুন কোনো কাউন্সিলর নেওয়া যাবে না। পথ একটাই খোলা বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া, যেটা সরকারি হস্তক্ষেপ। কোনো দেশে সরকারি হস্তক্ষেপ হলে আইসিসি কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাই বোর্ড সভাপতি পদত্যাগ করলে পরিচালকদের মধ্য থেকে কাউকে পরিচালক হতে হবে।’
ফিফার মতো আইসিসিও গত কয়েক বছর ধরে সদস্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। সরকারের হস্তক্ষেপের জন্য জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক সফল ক্রীড়াকে নিষেধাজ্ঞায় ফেলার মতো ঝুঁকি নেবে না সরকার। তবে পাপন বিসিবি সভাপতির পদ ছাড়বেন কিনা, সে আলোচনা থাকতে পারে।
গতকাল মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে পাপনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে বিসিবির সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। আগেও আমাদের এখানে অনেক মন্ত্রী ছিলেন, যারা বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশেও আছে। কিন্তু সেটা ইস্যু না। আমার আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল এই মেয়াদেই দায়িত্ব ছাড়ব। যেটা শেষ হবে আগামী বছর। আমি চেষ্টা করব এ বছর শেষ করা যায় কিনা।’
পাপনের এমন ইচ্ছার কথা অনেক বছর ধরেই শুনে আসছে দেশের মানুষ। একান্ত বাধ্যবাধকতা তৈরি না হলে হয়তো বিসিবি ছাড়বেন না তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম