আজ ৫ অক্টোবর। নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবচেয়ে সফল সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জন্মদিন। জীবনের ৩৯ বসন্ত পেরিয়ে ৪০তম বসন্তে পৌঁছে গেলেন তিনি। ১৯৮৩ সালের আজকের এই দিনে নড়াইল জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে মহিষখোলা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। মাতামহ ডাকনাম রাখেন কৌশিক। তিনি নড়াইলে এই নামেই বেশি পরিচিত। মাশরাফির বাবা গোলাম মোর্তজা ও মা হামিদা মোর্তজা।
২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাশরাফি-সুমি দম্পতির বিয়ে হয়। মাশরাফির জন্মের ঠিক ৩১ বছর পর ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর একই দিনে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সুমনা হক সুমির ঘরে দ্বিতীয় সন্তান জুনিয়র মাশরাফি সাহেল মুর্তজার জন্ম হয়। সাহেল রাজধানী ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
কাকতালীয়ভাবে একই দিনে বাবা-ছেলের জন্মদিন হওয়াতে পরিবারে যেমন বাড়তি আনন্দের বাতাস বয়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবা-ছেলেকে শুভেচ্ছা জানাতে ঝড় ওঠে।
বাংলাদেশ দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত তারকা পেসার সর্বমোট লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছেন ৩১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক ঘটে। তিনি অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে চারটি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্টফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে তিনি আট ওভার দুই বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন দুটি উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ৬০ রানে চার উইকেট নেওয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান।
২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। ২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারি। তিনি এ সময় ৪৯টি উইকেট নেন।
২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩৮ রানে চার উইকেট দখল করে অবিস্মরণীয় জয়ে মাশরাফি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মাশরাফি পেস বোলারের পাশাপাশি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন, যা কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। চোটই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। ২০১৭ সালে ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা থেকে অবসর নেন তিনি। মাশরাফি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার, যে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় অবসর নেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হোম সিরিজে তিনি অধিনায়কত্ব পান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ৬ মার্চ সফররত জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তৃতীয় ওডিআই ম্যাচের পর ওডিআই দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে যান।
ইএসপিএন কর্তৃক পরিচালিত ‘ওয়ার্ল্ড ফেইম ১০০’ এ বিশ্বের সেরা ১০০ জন ক্রীড়াবিদের মধ্যে মাশরাফি অন্যতম। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০টি উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তিনি ৫ম বোলার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে ১১৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এযাবৎকালের সফল অধিনায়ক মাশরাফি। ইএসপিএন ক্রিক ইনফোর তথ্য মতে, ২০২০ সালে সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলা পর্যন্ত ম্যাশ তিন ফর্মেটে ২৯৯ ম্যাচে উইকেট শিকার করেছেন ৩৮৫টি, ব্যাট হাতে ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৯২৬ রান করেছেন।
ইনজুরি, রাজনৈতিক ব্যস্ততাসহ নানা কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফেরা হয়নি এ পেসারের। তবে খেলে যাচ্ছেন দেশের ঘরোয়া লিগগুলোতে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই তারকা মাশরাফি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২২ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্রিকেট মাঠের সফল সাবেক ক্যাপ্টেন ‘ম্যাশ’ এখন রাজনীতির মাঠের সফল ক্যাপ্টেন হয়ে নড়াইলের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের তারকা এই ক্রিকেটার, নড়াইল -২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তার ছেলে সাহেল মুর্তজার জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকেই।
খুলনা গেজেট/এমএম