খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার
  এইচএসসি পরীক্ষা ফল আজ, থাকছে না আনুষ্ঠানিকতা

মানচিত্রের রূপে গিটার তৈরি করে খুলনার দুই বন্ধুর চমক

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ লাবনান জামি ও অহিদ আল হক দুই বন্ধু। তারা খুলনা আর্ট একাডেমির শিক্ষার্থী। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তারা বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলে গিটার তৈরির কাজ শুরু করেন। এক বছরের চেষ্টায় তারা গিটার তৈরি করতে সক্ষম হন। এখন তাদের তৈরি গিটার চমক সৃষ্টি করছে।

শেখ লাবনান জামি বলেন, গিটার তৈরি করতে গিয়ে ভাবতে থাকলাম নতুন ডিজাইনে কিছু করা যায় কি না। তারপর মাথায় এলো প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলে গিটার তৈরি করা যায় কিনা? সেই ভাবনা থেকে খোঁজ নিলাম মানচিত্রের ডিজাইনে গিটার আর কোথাও তৈরি হয়েছে কিনা? কোথাও পেলাম না। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের কোনো দেশে মানচিত্রের আদলে গিটার নেই। ফলে মানসিকভাবে স্থির করলাম বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলেই গিটার তৈরি করব। অবশেষে এক বছরের চেষ্টায় দেশের মানচিত্রের আদলে গিটার তৈরি করতে সক্ষম হই।কোনো দেশের মানচিত্রের আদলে ইলেকট্রিক গিটার এটিই প্রথম। এখন স্বপ্ন গিনেস বুকে নাম লেখানো।

তিনি বলেন, গিটারের ডিজাইনের জন্য খুলনা আর্ট একাডেমির মিলন বিশ্বাস স্যারের সহযোগিতা চাই। তিনি বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলে গিটারের ডিজাইন এঁকে দেন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের চেষ্টায় অবশেষে আমরা মানচিত্রের আদলে গিটার বানাতে সফল হয়েছি। অনেকে গিটার দেখে অবাক হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই গিটার তৈরি করতে চায়না থেকে সরঞ্জাম আনা হয়েছে। আর স্থানীয় কারিগর দিয়ে গিটারটি তৈরি করেছি। এতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। যেসব সরঞ্জাম দিয়ে বানিয়েছি, তাতে এমন গিটার কিনতে গেলে ৯০ হাজার টাকা দাম পড়বে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এটা বানিয়েছি। দেশের মানচিত্রের আদলে তৈরি গিটারটি গিনেস বুকে স্থান পাবে বলে আশা করছি।

বন্ধু অহিদ আল হক বলেন, সবকিছুর মূলে রয়েছে দেশপ্রেম। প্রথমে চিন্তা ছিল দেশের ওপরে কিছু করা যায় কিনা। অনেকেই অনেক কিছু করে। আমরা গিটার তৈরি করতে পারি, সেই গিটারকে দেশের মানচিত্রের আদলে করার জন্য চেষ্টা করি। এজন্য মিলন স্যারের কাছে ডিজাইনের সহায়তা নিয়েছি। এক বছরের প্রচেষ্টায় দেশের মানচিত্রের আদলে গিটার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, মানুষের কাছে স্বল্প মূল্যে গিটার পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। বাইরের একটি গিটার কিনতে এক-দেড় লাখ টাকা খরচ পড়ে। আমরা মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনতে চেয়েছি। এর আগেও আমরা গিটার বানিয়েছি, বিক্রিও করেছি। যা মোটামুটি মানুষের সাধ্যের ভেতর।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি সঙ্গীত শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে। গিটারের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে স্বল্প মূল্যে মানুষের হাতে এমন গিটার তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হবে। দেশের মানচিত্রের আদলে গিটার তৈরি করতে পেরে আমরা গর্বিত।

খুলনা আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে গিটারের অবকাঠামো তৈরি করার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলেকট্রিক গিটার প্রচলন রয়েছে বেশি। বড় বড় শিল্পীরা ইলেকট্রিক গিটারে গান পরিবেশন করে। আমার ছাত্র লাবনান জামি ও অহিদ ব্যান্ড সংগীত চর্চা করে। তারা নিজেরাই পেইনকিলার নামে একটি ব্যান্ড দল পরিচালনা করছে। তাই গিটারের প্রতি রয়েছে তাদের অধিক ভালোবাসা। তাই নবীনদের মাঝে যদি গিটারকে সহজলভ্য ও কম দামের ভেতর নিয়ে আসা যায় তাহলে খুব ভালো হবে। তারা এমন স্বপ্ন নিয়ে আমার কাছে এসেছিল, বলেছিল স্যার কাঠের ওপরে আমরা বাংলাদেশের একটি মানচিত্র তুলে ধরে গিটারের রূপ দিতে চায়। আপনি আমাদের সহযোগিতা করুন। আমি নবীনদের উদ্যোগ দেখে আপ্লুত। তাদের উদ্যোগ দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল। তাই আমি ডিজাইন করে দিয়েছি। তারা কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট। আমার সহযোগিতায় বাংলাদেশের মানচিত্রে রূপ পায় গিটারটি। গিটারের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর। ছাত্র লাবনান দুটি গান বাজিয়ে শোনায়। গান শুনে আমি অভিভূত হয়েছি।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তারা অনেক বড় হতে পারবে, একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে আমি এমনটা আশা করি। তাদের নাম গিনেস বুকে স্থান পেলে এটি বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনবে।

তিনি আরও বলেন, এই গিটারের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে ৪০ হাজার টাকা লেগেছে। আর্থিক সহায়তা তাদের পরিবার থেকে পেয়েছে। তাদের বাবা-মা সন্তানের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ রকম যদি প্রত্যেক পরিবার থেকে সন্তানের ভালো কাজের জন্য সাপোর্ট দেয়, তাহলে আমাদের দেশে এমন সুসন্তানরা সফল হবেন। এই মানচিত্রের অনুকরণে পৃথিবীর অন্য কোনো ব্যক্তি এখন পর্যন্ত গিটারে রূপ দেয়নি। তাদের সফলতায় আমি মুগ্ধ। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন নবীন এই উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন এবং গিনেস বুকে নাম লেখাতে সহযোগিতা করেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!