খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

মাঠভর্তি সোনালি ধানে স্বপ্ন পূরণ কৃষকের

আজিজুর রহমান

বাতাসে এখন শীতের অনুভূতি। সোনালি ধানে ভরে গেছে খেতের পর খেত। মাঠ জোড়া সবুজ ধানের শীষগুলোতেও এখন সোনা রঙয়ের হাসি। অগ্রহায়ণের শুরুতেই সোনালি রোদে সেই হাসি আরও ঝলমল করে ওঠে। হেমন্তের মৃদু বাতাসে দুলছে ধানের সোনালি শীষ। সবুজ ধানের বুক চিরে বেরিয়েছে ছড়া। ছড়াগুলো হয়েছে বড়, আর বড় হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। অনেক মাঠেই কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন কৃষক। ফুরফুরে মনে ফসল উঠানে তুলছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, ‘এ বছর ধান ভালো হয়েছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার আমন ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে। তাই কৃষকের চোখেমুখেও সোনালি ধানের সোনালি স্বপ্ন।’

উপকূলীয় জেলা খুলনার কৃষকরা এখন সবাই কিভাবে ধান ঘরে তুলবে, তা নিয়ে ব্যস্ত। কারণ গত বছরের আগের বছর ধানের দাম না পেয়ে দিশেহারা হয়েছিল চাষিরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে আমন ধানের চাহিদা আছে, দামও ভাল রয়েছে। এবার চাষিরা নির্ধারিতমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন।

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের কৃষক মো. ইয়াসিন মোল্যা খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘ধানের ছড়ায় মাঠ ভরে গেছে। সোনা-রঙের মাঠভর্তি ধানখেত দেখে প্রাণটা ভরে যায়।’

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৯২ হাজার ৮২০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ হেক্টর বেশি। গত বছর অর্জিত হয়েছিল ৬৪০ হেক্টর। এবার বিআর-২৩, ১০, ১১, বিনা-১৯, ০৭, ব্রি-৩০, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৭২, ৭৩, ৭৬, ৭৭, ৮৬ ও ৮৮ সহ স্থানীয় কিছু উচ্চমূল্য জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।

গত রোববার দাকোপ ও বটিয়াঘাটার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াশামাখা ভোর থেকে দলবেধে আইল ধরে কৃষক ছুটছেন জমিতে। দলবেধেই কাস্তে হাতে নেমে পড়ছেন ধানখেতে। ধান কেটে আঁটি বেঁধে রাখছেন খেতের মাঝেই। বিকেল থেকেই সেই আঁটি বোঝা বেধেঁ মাথায় করে বাড়ি নেওয়া শুরু। মাঠে নারী কৃষকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলা গ্রামের কৃষক হাফিজ মৌলঙ্গী বলেন, চারবিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৫শ’ টাকার মতো। তবে খেতে ধান দেখেছি ভালো হয়েছে। আশা করি প্রতি বিঘায় ১৭ থেকে ১৮ মণ করে ধান পাবো।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান খুলনা গেজেটকে বলেন, এবার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাকোপে ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। আমন নির্ভীক দাকোপে চলতি আমন মৌসুমে গেলবারের তুলনায় এবার ফলন বেশ ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, এরমধ্যে চাষিরা ৫ শতাংশ জমির ধান কেটে ফেলেছে কৃষকেরা। আগামী ২০ দিনের মধ্যে চাষিরা সব খেতের ধান ঘরে তুলতে পারবে বলে ধারণা করেন তিনি।

বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমনের ফলন অনেকটাই ভালো। যদিও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ভরা মৌসুমে নদীতে মিষ্টিপানি দেরিতে আসার কারনে আমনের বীজতলা তৈরিতে একটু দেরি হয়েছিল। তবে নানা ধরণের পদ্ধতিতে সেচ দেয়ার মধ্যদিয়ে হঠাৎ বৃষ্টি নামার পরে অধিকাংশ চাষিরা বীজতলা তৈরি করে চাষ শুরু করেন। এরপরে কোন সমস্যা দেখা গেলে স্থানীয় কৃষি অফিসকে অবহিত করা হতো। কৃষি অফিসের লোকজন সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ দিয়ে সব ধরণের সমস্যার সমাধান করে দেয়। যে জন্য মাঠে মাঠে সোনালি ধানে ভরে গেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, করোনা পরিস্থিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষকরা জমির ধান কাটছে। এ বছর ডুমুরিয়ায় ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। এরমধ্যে ৬০ শতাংশ ধান খেত থেকে কেটে ঘরে তুলেছে কৃষকরা।

ভালো ফলন হওয়ায় ভীষণ খুশি পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের শেখ রবিউল ইসলাম নামের কৃষক। তিনি বলেন, সাতবিঘা জমিতে বিআর-২৩ ও ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করেছি। ধানের ফলন বেশ ভালো। ধানের খেত দেখে মন ভরেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্বিপাক হয়নি। এ জন্য জেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ধান কাটছে, আবর কোনো কোনো উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে ধান কাটা শুরু করছে। এই মাসের মধ্যে প্রায় সব জায়গার ধান কাটতে পারে চাষিরা।

 

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!