সাতক্ষীরার দেবহাটায় মসজিদের নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৮ মে) দুপুরে জুম্মার নামাজ শেষে দেবহাটা সদর ইউনিয়নের চর রহিমপুর গ্রামের মসজিদে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া দুই গ্রামের মুসল্লিদের পাশাপাশি স্থানীয় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন, দেবহাটার চরশ্রীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহিন কাদের বাপ্পী (৩০), একই গ্রামের মৃত ছফেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে আবুল হাসান (৪৫), ইমাদুল গাজীর ছেলে ইদ্রিস আলী (২৬), মৃত আকিল উদ্দীন গাজীর ছেলে মুনসুর আলী (৫৫), চর রহিমপুরের শহিদুল সরদারের ছেলে শাহিন সরদার (৩৩),একই গ্রামের আব্দুস সবুর সরদারের ছেলে আতাউর (১৪), সাবুর আলী সরদারের ছেলে আশিকুর (৩৫), আব্দুস সবুরের স্ত্রী মহসিনা খাতুন (৩৭), শওকত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৮), মাজেদ সরদারের ছেলে শুকুর আলী (২৬), ছইল উদ্দীন সরদারের ছেলে হোসেন আলী (৩৫), শওকত আলীর ছেলে আহছান হাবীব (২৮), ওয়াহেদ আলী সরদারের ছেলে ফারুক হোসেন (৩৭)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতের স্বজনরা জানান, চর রহিমপুর গ্রামে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি জামে মসজিদ রয়েছে। মসজিদটি পূর্ব থেকেই চররহিমপুর জামে মসজিদ নামে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মসজিদটিতে পার্শ্ববর্তী গ্রাম চরশ্রীপুরের বাসিন্দারাও নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। ফলে দুই গ্রাম থেকে মসজিদটির সভাপতি ও সম্পাদক পদে দু’জনকে মনোনীনত করেন মুসল্লীরা।
মসজিদের বর্তমান সভাপতি রয়েছেন চরশ্রীপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আবুল হাসান গাইন এবং সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন চর রহিমপুর গ্রামের তোফাজ্জলের ছেলে রুহুল কুদ্দুস। মসজিদটির নাম কেবলমাত্র চর রহিমপুরের নামে নামকরণ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চরশ্রীপুর গ্রামের মুসল্লিরাও তাদের গ্রামের নামটি মসজিদের নামের সাথে সম্পৃক্ত করার দাবী করে আসছিলেন। বিগত কয়েকমাস ধরে এ নিয়ে মসজিদের দুই গ্রামের মুসল্লিদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মুলত মসজিদের বর্তমান সভাপতি আবুল হাসান গাইন চর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় তার নেতৃত্বাধীন ওই গ্রামের মুসল্লিরা তাদের গ্রামের নামটি চর রহিমপুরের আগে দেয়ার জন্য মসজিদ কমিটিকে তাগিদ দিয়ে আসছিল।
সম্প্রতি মসজিদটির উন্নয়ন কাজ শুরু হলে দুই গ্রামের নাম মিলিয়ে ‘চর রহিমপুর, চরশ্রীপুর জামে মসজিদ’ হিসেবে মসজিদের নামকরণ টাইলস খোচিত করা হয়। এতেই বাঁধে গন্ডগোল। নামকরণ টাইলসে কেন আগে চরশ্রীপুর না লিখে চর রহিমপুর লেখা হলো তা নিয়ে ক্ষুদ্ধ হন কমিটির সভাপতি আবুল হাসান গাইনের নেতৃত্বাধীন মুসল্লিরা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের রাতে মসজিদে লাগানো ওই নামফলকটির আংশিক ভেঙ্গে ফেলা হলে বৃহষ্পতিবার মসজিদটির জমিদাতা হিসেবে চর রহিমপুর গ্রামের মৃত সহিদুল ইসলামের ছেলে ইউনুছ আলী বাদী হয়ে মসজিদের সভাপতি আবুল হাসানসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে চর শ্রীপুর ও চর রহিমপুর গ্রামের মুসল্লিদের মধ্যে। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে এনিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায় দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে উভয় গ্র“পের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নিয়েছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।