খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ | ২৭ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  সিন নদীতে প্যারিস অলিম্পিকের জমকালো উদ্বোধন

মরে যাচ্ছে ভৈরব নদ, শঙ্কায় নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরের ভবিষ্যৎ

অভয়নগর প্রতিনিধি

দক্ষিণাঞ্চলের ব্যস্ততম নওয়াপাড়া বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই শঙ্কা কারণ ভৈরব নদ। নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে আসছে। দুই তীরে চর জাগতে শুরু করেছে। অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ ও ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা ব্যাপক হারে দখল।

এছাড়া অব্যাহত দখল ও দূষণ অপরিকল্পিত ড্রেসিং অপরিকল্পিত ঘাট নির্মাণের কারণে থমকে যাচ্ছে নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অচিরেই পায়ে হেঁটে পার হওয়া যাবে নাওয়াপাড়া ভৈরব নদ। তেমনটি ঘটলে অকার্যকর হয়ে পড়বে নওয়াপাড়া নদীবন্দর। বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার হ্যান্ডেলিং শ্রমিকসহ লাখো মানুষ। পথে বসবে শতশত ব্যবসায়ী। কেবল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নয়, পরোক্ষভাবে নদীবন্দরের সঙ্গে যুক্ত মোটরশ্রমিক ও ব্রোকার্স ইউনিয়নের শ্রমিকরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেই সাথে নদী বন্দর অচল হলে সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

এসব আশঙ্কা থেকে নদ বাঁচাতে কার্যকর ভুমিকা গ্রহণের দাবি উঠেছে। যদিও বছরের পর বছর ধরে এ দাবীতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম চললেও অজ্ঞাত কারণে তা মাঝপথে যেয়ে থেমে যায়। পাশাপাশি দখলদারীদের বিরুদ্ধেও অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হতাশ হয়ে পড়েছে স্থানীয় সচেতন মহল ও ব্যবসায়ী মহল।

সরজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া নদীবন্দরের ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় অর্ধকিলোমিটার জুড়ে নদীর দুই-তৃতীয়ংশে চর জমে ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়াও নদীবন্দরের নওয়াপাড়া জুট মিল সংলগ্ন এলাকা, বেঙ্গল খেয়াঘাট থেকে নওয়াপাড়া গ্লোবঘাট, তালতলা ঘাটসংলগ্ন এলাকায় পথিক পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীতে ছোট বড় কার্গ জাহাজ চলাচলে চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।

বিআইডব্লিউটি’এ সূত্র জানায়, গত ২০২১ সালের ২৪ জুলাই থেকে বিআইডব্লিউটি’র প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কার তথা ড্রেজিং শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ এই ড্রেজিংয়ে বন্দরের তেমন কোনো উপকার হয়নি।

নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও মের্সাস করিম ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন বলেন, ভৈরব নদ ঘিরে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্রোকার ইউনিয়নের ৪০ হাজারের অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। রয়েছেন নদনির্ভর শতশত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিরার। কিন্তু বিআইডব্লিউটি’এ এই বন্দরের ক্ষেত্রে বরাবরই চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

যদিও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বরাবরই দাবি করে আসছে, অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণের কারনে বেহাল দশায় পড়েছে ভৈরব নদ। তাছাড়া বন্দর এলাকায় ড্রেজিং করে মাটি বালু ফেলার জায়গা সংকটে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপকহারে চর জাগলেও মাটি বালু ফেলার জায়গা না পাওয়ায় ড্রেজিং সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রুপের সেলস্ এন্ড মার্কেটিং হেড মিজানুর রহমান জনি বলেন, নদীর তলদেশ পলিজমে ভরাট হয়ে আসছে। দু’তীরেই চর জাগতে শুরু করেছে। শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগরীর স্পন্দন ভৈরব নদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। খননটা যদি বন্দরের মত করে উপযোগী করে তৈরি করা না হয়। তাহলে এ মোকামে ব্যবসায় হুমকির মুখে পড়বে।

নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির যুগা-সম্পাদক শাহ মুকিত জিলানী বলেন, এই মোকামে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য নিয়ে প্রতিদিন ছোট বড় অনেক জাহাজ আসে। নদে সার, গম, ভূট্টা, সিমেন্ট, ভূষিমাল ও কয়লা নিয়ে জাহাজ নোঙর করে। ড্রেজার আছে, কিন্তু তারা যে কী করে তা সার ব্যবসায়ী সমিতির নলেজে নেই। ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়ায় এই বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘মূল চ্যানেলে জাহাজ চলাচলে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। আধুনিক নৌবন্দর স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হবে। নদীর সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজিং এর মাটি বালু ফেলার জায়গা সংকটে ড্রেজিং কাজে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অধিক চর পড়লেও জায়গা সংকটে ড্রেজিং করতে পারছিনা।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!