মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে। আজ শুক্রবার নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ হতে পারে। বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে আরও যোগ হতে পারেন সাত থেকে আটজন। এবার পূর্ণ মন্ত্রীর চেয়ে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তিন-চারজন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, আজ বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অবশ্য এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সব সময় প্রস্তুতি থাকে। তবে এখনও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ওপর মহল থেকে আসেনি।’
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। টেকনোক্র্যাট কোটায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমকে ফের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও অ্যাডভোকেট তারানা হালিমকে আবারও মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এর বাইরে চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়েশা খানকেও প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে।
গত ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। এর পর থেকেই আলোচনা আছে, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা পুনরায় সম্প্রসারিত হবে। ক্ষমতাসীন দল এবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৫০টির মধ্যে ৪৮টি পেয়েছে। গত বুধবার শপথও নিয়েছেন তারা।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন ২৫ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। ৩৭ সদস্যের এই মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। এর আগের মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী এবারের মতোই ২৫-২৬ জনে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ২০ জনের মতো। এ ছাড়া তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে আগের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৯ সদস্যের।
জানা গেছে, সরকারি কাজে গতি বাড়াতে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা বিগত মন্ত্রিসভার সমান বা এর কাছাকাছি সংখ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে। এখনও দুটি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দু’জন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আলোচনায় আছে। আগের মন্ত্রিসভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি এবার সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তাঁকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় ক্লিন ইমেজ এবং অভিজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে দলের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতারা প্রাধান্য পেতে পারেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত ছিলেন। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁর চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
বর্তমানে টেকনোক্র্যাট কোটায় দায়িত্ব পালন করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এসব মন্ত্রণালয়ে অতীতে একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেখা গেছে। এবার সেগুলো পূরণ করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত একজন সদস্যকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। ওই নারী সদস্য এবার দ্বিতীয় দফায় সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরপর দু’বার সংরক্ষিত নারী সদস্য হওয়ার নজির কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী ছিলেন। এবার এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এককভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাজুল ইসলাম। এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে। এবার উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কম রয়েছেন। স্থানীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদটি উত্তরবঙ্গের কেউ পেতে পারেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে যশোর এবং কিশোরগঞ্জের দু’জন সংসদ সদস্যের বিষয়ে আলোচনা আছে। দু’জনেরই পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন পূর্ণ মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে বরাবরই। এবার এখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একাই দায়িত্বে রয়েছেন। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী কিংবা বিভাগ ভাগ করে আরেকজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আছে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের কথা শোনা যায়।
২০০৯ ও ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের জায়গা দেওয়া হয়েছিল। এর পর আর তারা সরকারে আসতে পারেনি। এবারও কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
সরকারদলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সভাপতিমণ্ডলী এবং সম্পাদকমণ্ডলীর তিন-চারজন নেতা এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে তারা এখনও আশা ছাড়েননি। এসব নেতা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় অন্য সব বিভাগের তুলনায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রতিনিধি কম। এই চারটি বিভাগের প্রতিটিতে দু’জন করে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছেন তিনজন করে মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী। এই সংখ্যা চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন। ঢাকা বিভাগে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি, ১৪ জন।
এ জন্য সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় ওই চার বিভাগ প্রাধান্য পেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এই বিবেচনায় এবার কম পাওয়া বিভাগ ও দীর্ঘদিন মন্ত্রী না থাকা জেলাগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
রংপুর বিভাগ থেকে আবুল হাসান মাহমুদ আলী পূর্ণ মন্ত্রী ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগে আগের মন্ত্রিসভায় একজন পূর্ণ মন্ত্রী ও দু’জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগ থেকে আরও একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন। রংপুর বিভাগও একজন প্রতিমন্ত্রী পেতে পারে। খুলনা বিভাগে গত মেয়াদে তিনজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবার দু’জন পূর্ণ মন্ত্রী পেয়েছে। আরেকজন প্রতিমন্ত্রী যোগ হতে পারে। বরিশাল বিভাগ থেকে আগের বার একজন পূর্ণ এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর থাকলেও এবার দু’জন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম