বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৩ হাজার জেলে প্রস্তুত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার মধ্য রাত থেকে ইলিশ মাছ আহরণে যাত্রা শুরু করবে তারা। ৭ আগস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় ইলিশ মাছ ধরা। তার ২২ দিন পর আবারও অনুমতি পায় তারা। তবে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফ’র ৪ হাজার ৩৩৪ জন জেলে পরিবারকে জনপ্রতি ২৫ কেজি চাল বিতরণ আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে।
সকালে বলইবুনিয়া ৩১৫, বহরবুনিয়া ২২৫ ও বনগ্রাম ইউনিয়নে ১৬৫ জন জেলে পরিবারের মাঝে এ চাল বিতরণ করা হয়। এসময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের মেরিন ফিসারিজ অফিসার আব্দুল্লাহ আল মেদাচ্ছের, ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান আলী খান, চেয়ারম্যান রিপন চন্দ্র দাস, ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর শেখ, এসকেন খান, উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এসএম আলী খান, প্রমুখ।
এদিকে সাগরে নির্ভরশীল জেলেরা সকাল থেকে উপজেলার বলইবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রেনীখালী, দোনা, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরণের পঞ্চকরণ, বারইখালীর কাস্মির, তুলাতলা, খাউলিয়ার কুমারখালী, আমতলী, মধ্য বরিশাল, পশুরবুনিয়া, চিংড়াখালীর পূর্ব-চন্ডিপুর পশুরিপাড়া, চন্ডিপুর, বারইখালীর উত্তর বারইখালী, কাষ্মির, হোগলাবুনিয়ার বদনী ভাঙ্গা, পাঠামারা, সদর ইউনিয়নের গাবতলা, কাঠালতলা ও পুটিখালী ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের প্রায় এক হাজার ট্রলার-নৌকা শত শত শ্রমিক নিয়ে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
প্রতিটি ট্রলার ও নৌকায় ৫ মাসের খাবার চাল, ডাল, তেল, লবণ, রান্না করার শুকনা কাঠসহ বিভিন্ন সামগ্রী নৌকায় তুলতে দেখা গেছে জেলেদের। মধ্য রাতের অপেক্ষায় রয়েছে সকলে। দীর্ঘ ২২দিন অবকাশ কালিন সময় পার করে কর্মময় জীবনে ফিরছেন এসব জেলেরা। চোঁখে মুখে আনন্দের ছাপ।
কথা হয় সোনাখালী গ্রামের জুয়েল হাওলাদার, মো. নাইম খান, সবুর হাওদার, সিদ্দিকুর রহমান গাজী, আব্দুল হাই খান, উত্তর ফুলহাতা গ্রামের এশারাত তালুকদার, পঞ্চকনের হায়াত বাদশা, দেলোয়ার মাল, শাহিন হাওলাদারসহ একাধিক জেলেরা বলেন, মাছ ধরার মৌসুম শুরু, সাগরে যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। ৫ মাস পার করতে হবে গভীর সাগরে। জালে মাছ বেশী ধরা পড়লে দাদন কেটে বছর পার হবে। মাছ কম হলে দেনা হতে হবে আরও বেশী। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে অগ্রীম টাকা দিয়ে বেতনে শ্রমীকদের নিতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্রলার ও নৌকায় ১০/১২ জন শ্রমীক রয়েছে। তাদের সাথে এদের মাসিক বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
জেলেদের দাবি সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি বিনা সুদে ব্যাংকের মাধ্যমে লোন দেওয়া হলে দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তারা। বছরের পর বছর আর দেনা গ্রস্ত হতে হবে না।
এ সর্ম্পকে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, এ উপজেলার সাগর নির্ভরশীল প্রায় ৩ হাজার জেলে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন পর আজ মধ্যে রাত থেকে সাগরে যাত্রা শুরু করছেন। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে তাদের বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফ’র ২৫ কেজি করে চাল জেলেদের মাঝে বিতরণ শুরু করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিষেদ্ধাজ্ঞার সময়ে জেলায় ইলিশ শিকারের সাথে জড়িত ১২ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ১২ হাজার ইলিশ জেলেসহ জেলায় মোট ৩২ হাজার ৬শ ৯৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে প্রায় ৫০০ টির উপরে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় এই ২২ দিন মাচ ধরায় নিষেদ্ধাজ্ঞা ছিল। এই সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই নিষেদ্ধাজ্ঞার ফলে ইলিশের আকার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি পরিমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাষ্ট্রের যেমন লাভ হবে, তেমনি জেলেরাও লাভবান হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।