যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক ইসরাফিল হত্যা মামলায় তিন আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে প্রত্যেকের বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, যশোর সদর উপজেলার ঘুণী মাঠপাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলী ওরফে সেকন শেখের ছেলে ইউনুস আলী শেখ, অভয়নগর উপজেলার সরখোলা গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীন মোল্লার ছেলে ইব্রাহিম মোল্লা ও কেশবপুর উপজেলার ভাল্লুকঘর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী খানের ছেলে ইউনুস আলী খান। বর্তমানে এরা সবাই পলাতক রয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্পেশাল জজ (জেলা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এ আদেশ দিয়ে প্রত্যেকের প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এসময় স্পেশাল পিপি সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের ইসরাফিল হোসেন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর দুপুর দুইটার সময় মণিরামপুর উপজেলার দোলখোলা মোড় থেকে অপরিচিত একজন তার মোটরসাইকেল ভাড়া করে। এরপর তাকে যশোর সদর উপজেলার ঘুণী গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। রাত ১০টার পর ইসরাফিল ফিরে না আসায় তার বাড়ি থেকে খোঁজাখুজি শুরু হয়। তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন সকাল ৯ টায় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাকে অপর আসামি ইউনুচ আলীর বাড়িতে নিয়ে রেখেছে। সেখানে ইসরাফিল অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরিবারের লোকজন ইউনুচের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী রোজিনা বেগমের মাধ্যমে জানতে পারেন, আসামিরা ইসরাফিলকে ওই বাড়িতেই এনেছিল ও একইসাথে খাওয়া দাওয়া করেছে। পরে ইসরাফিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার কথা বলে ওই তিন আসামি বাড়ি থেকে নিয়ে যায় বলে জানান রোজিনা। এরপর তাদের কোথাও খোঁজা করে না পেয়ে নিহতের ছেলে ইউসুফ আলী বাদী হয়ে মণিরামপুর থানায় পরিকল্পিতভাবে অপহরণ, গুম ও মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার পর ঘুণী সরুপদিয়া খাল থেকে ইসরাফিলের মরদেহ উদ্ধার হয়। এরপর অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয় ও পুলিশ আসামিদের আটক করে। বসুন্দিয়া ক্যাম্পের তৎকালীন ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে উঠে আসে আসামিরা খুনীচক্রের সদস্য। মোটরসাইকেল ছিনতাই উদ্দেশ্যে ইসরাফিলকে অপহরণ করে খাবারে বিষাক্তদ্রব্য মিশিয়ে তাকে প্রথমে অজ্ঞান করে। পরে হত্যা করে খালের মধ্যে লাশ ফেলে দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে ২০১০ সালের ২২ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দেন। একইসাথে এ মামলার এজাহারভূক্ত আসামি কেশবপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে মুজিবর রহমানকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
পরে মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়। ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় আদালত ওই তিনজনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ প্রত্যেকের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন।
খুলনা গেজেট/কেএম