খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে কারখানায় আগুন : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২
  হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম তদন্তে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫
ডিজিটাল ওয়েবীজ স্কেলে পরিমাপ করায়

ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমলেও বেড়েছে রাজস্ব আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

ডিজিটাল ওয়েবীজ স্কেলে পরিমাপ করায় রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হওয়ায় আমদানি কমলেও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়। ফলে গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭৩.৪৮ কোটি টাকা। সম্প্রতি ভোমরা বন্দর দিয়ে গুড়োদুধ ছাড়া সকল ধরনের পণ্যের আমদানির অনুমোদন পাওয়ায় এ বন্দরে আসতে শুরু করেছেন অন্য বন্দরের ব্যবসায়িরা। সব ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করলে এই বন্দর থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে দাবি কাস্টম কর্তৃপক্ষের।

ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২২ -২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬৩১.৭২ কোটি টাকা। যেখানে ৮২ হাজার ২২৮টি গাড়ীতে পণ্য আমদানি হয়েছিল ৩০ লাখ ৯ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ৯০২ টি গাড়ীতে ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করে রাজস্ব অদায় হয়েছিল ৯০৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭০ কোটি ৬৯ লাখ। ফলে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭৩.৪৮ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্ধির হার ৩৭.২৬ শতাংশ।

সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২১ হাজার ৬২৭টি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৫৮০টি। যার রপ্তানি মূল্য ছিল যথাক্রমে ৩০২১.০৪ এবং ৩০৯০.৬৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানিকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ৬৩ হাজার ৯০২টি, যা পূর্বের অর্থবছরে ছিল ৮২ হাজার ২২৮টি। ফলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা কম এসেছে ১৮ হাজার ৩২৬টি। তবে বর্তমান সময়ে ভোমরা বন্দরে ডিজিটাল ওয়েবীজ স্কেলে পণ্য পরিমাপ করায় রেভিনিউ লিকেজ বন্ধ হওয়ায় অমদানি পণ্যবাহী গাড়ী কমলেও বেড়েছ রাজস্ব।

এছাড়া আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরেই সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের অবস্থান। বর্তমানে দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য, আবশ্যকীয় পণ্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০ পণ্যবাহী ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার শতাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ ও ভারতে আসা-যাওয়া করেন।

এদিকে ভোমরা স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলমান রয়েছে। অচিরেই, কাস্টম হাউস, শেড, ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, অর্ন্তজাতিকমানের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ সকল ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করলে এই বন্দর থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে জানিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা শুল্ক স্টেশনটি। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউস নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ২৯ আগস্ট বেনাপোল বন্দরের ন্যায় দুধ ব্যতিত আমদানিকৃত সকল পণ্যের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাস্টমস থেকে কলকতার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার হওয়ায় পণ্য পরিবহনে খরচ সাশ্রয় করতে আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখান।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আলহাজ্ব মোঃ ওহিদুল ইসলাম জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে কাস্টমস প্রশাসন। কোনো অনিয়ম দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকায় এখানে তৈরি হয়েছে ব্যবসাবান্ধব অনুকূল পরিবেশ।

তিনি আরো বলেন, এর আগে এই বন্দরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ছিল। সম্প্রতি গুড়া দুধ ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছে এনবিআর। একই সাথে ভোমরা বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পর এই বন্দরের রাজাস্ব আদায় বেড়ে যাবে কয়েক গুন। কর্মসংস্থার হবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের।

সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাগ্য খুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুঁকছে। ভবিষ্যতে সরকারি রাজাস্ব আদায়ে ভোমরা স্থলবন্দর দেশের শীর্ষস্থানে উঠে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার (যুগ্ম কমিশনার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ এনামুল হক বলেন, রেভিনিউ লিকেজ বন্ধ করতে এখানে ডিজিটাল ওয়েবীজ স্কেলে পণ্য পরিমাপ করা হয়। এ বন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সকল পণ্য পরিবহনের ওজন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই, শুল্ক গোয়েন্দাসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে এনালক পদ্ধতিতে কোনো ওজন পরিমাপের সুযোগ নেই। ফলে বর্তমান সময়ে পণ্যবাহী গাড়ীর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!