খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ফেসবুকে ঘোষণা দিলেন বিদায়ের
  কাল ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব, পরিদর্শন করবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প
সময় বাড়লো ১৫ মার্চ পর্যন্ত

ভোমরা দিয়ে তিন মাসে এক লাখ ১১ হাজার মে. টন চাল আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত তিন মাসে ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানি হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল। খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে আমদানি শুরু হয়। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৮৪ টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে এই পরিমাণ চাল আমদানি করে।

এদিকে আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও সাতক্ষীরার হাটবাজার গুলোতে চালের দামের উপর কোন প্রভাব পড়ছে না। পর্যাপ্ত চালের মজুদ থাকলেও স্থানীয় বাজারে গত সপ্তাহে প্রকারভেদ চালের দাম আগের তুলনায় কেজি প্রতি এক-দুই টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চাল ৫৫ টাকা, আঠাশ চাল ৬৫-৭০ টাকা, মাঝারি ব্রি-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৫ টাকা। মিনিকেট নামে পরিচিত সরুচাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ইন্ডিয়ান মিনিকেট ৭৫ টাকা, বাসমতি ৯০ টাকা, পাইজাম ৫৬ থেকে ৬০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। সরু নাজিরশাইল বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। কাটারিভোগ ও অন্যান্য সুগন্ধি চালের দাম আরও বেশি। আমন ধানের ভরা মৌসুম শেষে এ মূল্য খুবই অস্বাভাবিক। চালের আমদানি প্রক্রিয়ায় দাম কমার কথা থাকলেও উল্টো আরও বাড়ছে। এতে করে কষ্ট পাচ্ছে গরিব খেটে খাওয়া মানুষ।

ক্রেতারা অভিযোগ করে বলছেন, ব্যবসায়ীরা অন্যায্য মুনাফা অর্জন করছেন ভোক্তাদের কাছ থেকে। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেশি। তাই আমদানি করা চালের দামও বেশি। সেজন্য আমদানি করা চালের দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে আসা একজন ভুক্তভোগী ক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, প্রতিবছর এ সময় নতুন ধান উঠলে বাজারে চালের দাম অনেকটা কমে আসে। কিন্তু এবার বাজারে চিত্রটা উল্টো। শুনেছি ভোমরা পোর্ট দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় চাল আমদানি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে সব চালের দাম আগের তুলনায় বেশি। চাল আমদানির কোন প্রভাব পড়ছে না বাজারে। তিনি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।

এদিকে ভরা মৌসুমেও চালের দাম না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় দাম কমছে না চালের। মাসখানেক আগে কৃষকের ঘরে উঠেছে আমন ধান। তারপরও সাধারণ মানুষকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। চালের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তা কিনতে খেটে খাওয়া মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

অপরদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেশি থাকায় আমদানিকৃত চালের দামও বেশি পড়ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। আপাতত বাজারে চালের দাম কমার কোন সম্ভাবনা দেখছে না ব্যবসায়ীরা।

এ অবস্থায় চাল আমদানির শুল্কমুক্ত সুবিধার সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়েছে। আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে চাল আমদানি করতে পারবে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু মুসা জানান, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোমরা বন্দর দিয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। সরকার গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৩ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়। এ সময়ের মধ্যে আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। তাতেও দেশের বাজারে চালের দাম না কমায় ভারত থেকে আমদানির জন্য আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত একমাস সময় বাড়িয়েছে সরকার।

ভোমরা স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারিভাবে নন-বাসমতী সিদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ মাস পর্যন্ত বাড়ানো হলো।

ভোমরা স্থল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ রুহুল আমিন বলেন, দেশের শীর্ষ আমদানি কারক ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানি করছে। যেহেতু চাল নিত্যপণ্য এবং বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সেহেতু আমদানিকৃত চাল বন্দরে আসা মাত্রই দ্রুত ছাড়করণের ব্যবস্থা করা হয়। চাল আমদানির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আশা করা যায় সামনে দামের উপর প্রভাব পড়বে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!