দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন যাতে সভা-সমাবেশ করতে না পারে, সরকারকে সেই পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। ওই চিঠিতে এ ধরনের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দিতে অনুরোধ জানানোর কথা রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো হতে পারে। এর আগের নির্বাচনগুলোয়ও এমন চিঠি পাঠানোর নজির রয়েছে। ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কমিশন মনে করে, যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু অনিবন্ধিত দল ও সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই ইসির। এমনকি যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাদের বিষয়েও আচরণবিধি প্রয়োগ করা দুষ্কর। এছাড়া নির্বাচনবিরোধী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে ভোটারদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চিঠি দেওয়ার বিষয়ে এক নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা হলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমরা চাই নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকুক। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে ভোট দিক। ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তায় কমিশন যে কোনো পদক্ষেপ নিতেই পারে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৫ নভেম্বর তফশিল ঘোষণা করেন। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পরদিন ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে প্রচার। আর ভোট হবে ৭ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আসছে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটি বিএনপির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচি নির্বাচন আয়োজন এবং অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে বাধা হিসাবে দেখছে কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, বিএনপির ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন জেলায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তথ্য পেয়ে আসছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া রোববার অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এসব সভা-সমাবেশ হোক নির্বাচন কমিশন তা চায় না। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাতে কর্মসূচির অনুমোদন না দেয়, এ বিষয়ে অনুরোধ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
বিভিন্ন দলের কর্মসূচির বিষয়ে ইসির অবস্থানের ইঙ্গিত শনিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের বক্তব্যেও উঠে আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। এখন এটি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। কমিশন যদি মনে করে আরও কোনো সাজেশন দেওয়ার প্রয়োজন আছে, তাহলে কমিশন সেটা করবে। অনিবন্ধিত দলের সভা-সমাবেশ ইসির এখতিয়ারে পড়ে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে কোনো কার্যক্রম অবশ্যই নির্বাচন পরিপন্থি হিসাবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে যে প্রচলিত বিধিবিধান ও আইন আছে, তা সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।
সূত্র আরও জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টিও আনার পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে এ নির্বাচনের প্রার্থীরা গিয়ে বক্তব্য দেলে তা আচরণ লঙ্ঘনের শামিল হবে, সেটিও চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়-রাজনৈতিক দলের এমন সভা-সমাবেশের অনুমোদন যাতে দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাবে কমিশন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানান, চিঠির খসড়া ইতোমধ্যে কমিশনের অনুমোদনের জন্য নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করলে ওই চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। তারা আরও জানান, এর আগের নির্বাচনগুলোয়ও এ ধরনের চিঠি পাঠানোর নজির রয়েছে।