খুলনার মহেশ্বরপাশা খাদ্য গুদামের অভ্যন্তরে ভৈরব নদীর তীরে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক গম সংরক্ষণের স্টীল সাইলো নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের পিএম প্রকৌশলী ওমর ফারুক। কার্যাদেশ অনুযায়ী আগামী ১১ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৮২ দশমিক ২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ ২/১ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে আশাবাদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খাদ্যশস্যের গুণগতমান বজায় রেখে তিন বছর পর্যন্ত গম সংরক্ষণ করা যাবে এবং খাদ্যশস্য নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় খুলনায় গমের স্টিল সাইল নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি। প্রায় ৩’শ ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বাংলাদেশি কোম্পানি ম্যাক্স গ্রুপ এবং তুর্কি কোম্পানি আল তুনতাস যৌথভাবে প্রকল্পের কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক যৌথভাবে এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে।
স্টিল সাইলোটি নির্মিত হলে ৭৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন গম সংরক্ষণ করা যাবে। এবং ৩ বছর পর্যন্ত গরমের গুণগতমান বজায় থাকবে। কোন হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর মেশিন দ্বারা স্টিল সাইলোর ৬ টি ঢোল, চুল্লি বা বিনে গম সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতিটি ঢোল, চুল্লি বা বিনের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার ৭০০ টন।
জানা যায়, প্রকল্পটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে স্টিল সাইলোর বিনে গম উঠানোর জন্য ভৈরব নদীর তীরে বিশ্বমানের একটা অত্যাধুনিক জেঁটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্পের পিএম প্রকৌশলী ওমর ফারুক খুলনা গেজেটকে বলেন, এখানে প্রজেক্টটাকে দুইটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে অপারেশনাল এরিয়া। অন্যটা হচ্ছে রেসিডেন্সিয়াল অফিস কাম এরিয়া। অপারেশনাল এরিয়া কাজটা প্রায় শেষের পথে। শুধু ইলেকট্রিক্যাল কানেকশন বাকি আছে। আগামী ২/১ মাসের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রজেক্টের টাইমলাইন ধরা আছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তুর্কি কোম্পানি আল তুনতাস স্টিল সাইলোর যে ম্যাটেরিয়ালস আছে সেগুলো সাপ্লাই দিচ্ছে এবং এর সঙ্গে তারা কাজগুলো করছে। আর প্রকল্পের বাকি ৭৫ শতাংশ কাজ ম্যাক্স গ্রুপ তার নিজস্ব জনবল, ইঞ্জিনিয়ার এবং ইকুপমেন্ট দিয়ে কাজটা করছে।
তিনি বলেন, সাইলোর বিনে গম উঠানোর জন্য নদীর পাড়ে বিশ্বমানের যে জেঁটি তৈরি করা হয়েছে। জেটির কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জেঁটির কাজটা করার। জেঁটির কাজ করার জন্য বড় হ্যামার দিয়ে স্টিলের পাইপ ক্যাচিং দিয়ে সেগুলো বসানো। হয়েছে। এক একটা ক্যাচিং ৪২ ফুট লম্বা। রেইন পোস্ট ব্যান্ড এবং কংক্রিট দিয়ে কাজটা কমপ্লিট করে তারপর স্নাপ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের এ জেঁটির ৯০ শতাংশ ম্যাটেরিয়ালস জার্মান, ইউএসএ, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে ব্যবহার করা প্রতিটি ম্যাটেরিয়ালসের মান যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েট। নদীপথে আসা কার্গো থেকে গম লোড আনলোড করার জন্য জেঁটির উপর যে দুইটা মেশিন বসানো হয়েছে এর একটা ব্যাডশীপ আনলোডার। এটা জার্মান থেকে আনা হয়েছে। জার্মানের টিএ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট যারা আছেন উনাদের মাধ্যমে এটা সম্পন্ন করা হয়েছে । সাথে আছে একটা ব্যাগ আনলোডার এটাও জার্মান থেকে আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ম্যাক্স একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি। ম্যাক্সের নিজস্ব সব আন্তর্জাতিক মানের ইকুপমেন্ট আছে সেগুলো এই প্রজেক্টে ব্যবহার করে অত্যন্ত দক্ষতা এবং গুণগতমান বজায় রেখে এবং যত্ন সহকারে আমরা কাজটি করছি। দেশের বাইরের কোন কোম্পানি এই কাজগুলো করলে তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ দিতে হতো। এই কাজগুলো করার ফলে আমাদের সক্ষমতাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ম্যাক্স যে কোনো আন্তর্জাতিক কাজ করতে সক্ষম। ইতিপূর্বে তারা অত্যন্ত সফলতার সাথে প্রজেক্টগুলো হ্যান্ডওভার করেছে। এটাও ওয়ার্ড ব্যাংকের প্রজেক্ট। তাদের কাছে আমরা সময়মতো প্রজেক্ট হ্যান্ডওভার করতে পারবো। তিনি বলেন এই প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা নদী পথ সড়ক পথ এবং রেলপথ তিন উপায়ে স্টিল সাইলাতে গম সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর খাদ্য বিভাগ এখান থেকে যথেষ্ট উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, এখানে গমের স্টিল যে সাইলোটা নির্মিত হচ্ছে এটা খুবই আধুনিক একটা সিস্টেম। ওভারঅল কাজের গুণগতমান দেখে শনিবার (২৮ আগস্ট) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় পরিদর্শনে এসে খুবই খুশি হয়েছেন। এ ধরনের আন্তর্জাতিক মানের প্রজেক্টের কাজ দেশীয় কোম্পানি ম্যাক্স গ্রুপ এবং তুর্কি আল তুনতাস কোম্পানি করতেছে। এজন্য উনি আমাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী খুলনা গেজেটকে বলেন, আমদানিকৃত গমের ৬০ শতাংশ চিটাগাং বাকি ৪০ শতাংশ মোংলা পোর্টে খালাস হয়। মোংলা পোর্টে স্লো খালাসের কারণে কস্টিং বেশি পড়ে। এটি চালু থাকলে লাইটার জাহাজ, এসডি, সিএসডি কস্টিং কম হবে। স্টিল সাইলোতে সংরক্ষণ করা গম তিন বছর পর্যন্ত গুণগতমান বজায় থাকবে। এ অঞ্চলের গম প্রাপ্তিতে সহজলভ্যতা হবে। খাদ্য সংরক্ষণ সু-সংগত হবে। খুলনা বিভাগের দশটি জেলাসহ উত্তরবঙ্গে এবং নদীপথে বরিশাল বিভাগেও গম সরবরাহ করতে সক্ষম হব।
খুলনা গেজেট/এনএম