খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ড. ইউনূস ১৮ কোটি জনগণের, পদত্যাগ চাই না : ফারুক
  ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

ভূ-রাজনীতির জটিল সমীকরণে বাংলাদেশ

গেজেট ডেস্ক

অর্থনৈতিক বিকাশ, রাজনৈতিক পরিপক্বতা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। বঙ্গোপসাগর তথা বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। আবার এ অঞ্চলের তিনটি বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের সমীকরণ এবং ওই তিন বৃহৎ শক্তির নিজেদের মধ্যকার জটিল সমীকরণের মাঝখানে রয়েছে বাংলাদেশ।

ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও বিশেষ সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অধিকারভিত্তিক ইস্যুতে অস্বস্তিকর সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আসন্ন আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন বৃহৎ শক্তির অবস্থান জনসম্মুখে ক্রমাগত প্রকাশিত হচ্ছে।

গত বুধবার (১৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে শেখ হাসিনার নেওয়া অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করা হয় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। আবার একই দিন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরদের মধ্যে দিল্লির বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে অনুরোধ জানানো হয়। গোটা বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বিশেষজ্ঞদের মতে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির একটি থিয়েটারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি ইউনিভার্সিটির বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘কূটনীতিতে কৌশলগত পদক্ষেপ (স্ট্র্যাটেজিক মুভ) এবং এর পাল্টা পদক্ষেপ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে– এটি স্বাভাবিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ বলে মনে হয়।’

বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় এবং একইসঙ্গে এখানে ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য ও সমন্বয় থাকাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে এবং এখানে বিচক্ষণতার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রেখেই বাংলাদেশকে এগোতে হবে।’

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখানে মনে রাখতে হবে কূটনীতি স্থবির নয়, বরং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। যেকোনও সম্পর্ক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা পায় এবং এটিই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত।’

আঞ্চলিক ভারসাম্য : দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারত। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এ অঞ্চলের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের গভীর সম্পর্কের আলোকে বিবেচনা করা দরকার। এ কথা উল্লেখ করে মো. শহীদুল হক বলেন, ‘১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু নিজেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কী সেটির সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ইটারনাল এবং বিশেষ সম্পর্ক। এটি সবসময়, সব বিষয় ও সর্বক্ষেত্রের জন্য। আমরা এখন যেটি দেখছি সেটিকে ওই সম্পর্কের প্রতিফলন বলা যায়।’

তিনি বলেন, এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। ভারতে কংগ্রেস সরকার বা বিজেপি সরকার যেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ নিয়ে তাদের সবার মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে এবং এর পরিবর্তন হয় না। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে ভারতের সমর্থন পেয়ে আসছে বাংলাদেশ।

ত্রিমুখী সম্পর্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। আবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। কিন্তু ভারতের দুই বন্ধু– বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে, যা প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে দিল্লিতে পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ও বিজেপির ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক শুভ্রকমল দত্ত মনে করেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্কটি একান্তই দ্বিপক্ষীয়। কিন্তু ভূ-রাজনীতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভাব অন্য দেশের ওপর পড়তে পারে।

তিনি বলেন, আমার মতে ভারত চায় না বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনও প্রভাব তাদের ওপর পড়ুক। ভারত উভয় দেশের বন্ধু এবং তাদের এ বিষয়ে একটি দায়িত্ববোধ আছে। যদি দিল্লির পক্ষে সম্ভব হয় তবে অবশ্যই বন্ধুদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর জন্য তাদের একটি চেষ্টা থাকবে।

নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে ভারতের যে উদ্বেগ ছিল সেটি সমাধানে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্পর্ক ভিন্নমাত্রার। তাদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া আছে। ফলে এক দেশের সমস্যা অন্য দেশে অনুভূত হবে বলে প্রতীয়মান হয় বলে তিনি জানান।

শিগগিরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফর করবেন জানিয়ে শুভ্রকমল দত্ত বলেন, আমার ধারণা যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কিছু বললে সেটি হবে একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!