যশোরের চৌগাছার উপর দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদ এখন মরা খাল। নদের বেশ কিছু এলাকার দিকে তাকালে অনেকেরই মনে হবে নদটি বাঁচার জন্য যেন বোবা কান্না করছে। ভূমি দস্যুদের নীল ছোবল আর যুগযুগ ধরে পলি জমার কারণে নদের এই বেহালদশা বলে মনে করছেন নদ পাড়ের বাসিন্দারা।
সুদুর চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা থেকে কপোতাক্ষের উৎপত্তি। সাপের মত আঁকা বাকা হয়ে চৌগাছার বুক চিরে মিশেছে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের আজ চরম বেহালদশা। নদের চৌগাছা এলাকার বহু অংশ ইতোমধ্যে শুকিয়ে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পড়ন্ত বিকেলে দূরন্ত ছেলেরা নদের বুকে ক্রিকেট খেলাসহ নানা খেলাধূলায় মেতে উঠছে। কৃষক গরু লাঙ্গল নিয়ে নদের বুক চিরে চলে যাচ্ছে আপন ঠিকানায়। বছরের বার মাসই যে নদে থৈথৈ করেছে স্বচ্ছ পানি, মাঝি পাল তোলা নৌকা নিয়ে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে ছুটে গেছেন আপন ঠিকানায়, দিনের বেশির ভাগ সময় নদে পানির সাথে মিতালী করে জেলেরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, সারাক্ষণই পাখ-পাখালির কলরবে নদ থাকত মুখোরিত, সেই সব এখন কেবলই স্মৃতি।
নদ পাড়ের বাসিন্দা নন্দ লাল সরকার, নিতায় সরকার, অজিত কুমার, ফজলুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বাপ দাদাদের মুখে শুনেছি কপোতাক্ষ নদে সে সময়ে বড়বড় জাহাজ চলেছে। বৃটিশ বণিকেরা সুদুর লন্ডন থেকে নানা ধরনের পন্য সামগ্রী নিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে কপোতাক্ষে আসত। এরপর চৌগাছা এরিয়াতে তারা প্রবেশ করে বিশাল বিশাল জাহাজ গুলো উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের বর্তমান খলশী বাজারের পশ্চিমে নোঙ্গর করতেন। জাহাজে করে নিয়ে আসা শিশুদের খেলনাসহ নানা ধরনের পন্য সামগ্রী সেখানে খালাশ করা হতো, যে কারণে ওই সময়ে স্থানটিকে খালাশী বলে সকলেই চিনতেন। বৃটিশদের শাসনামল শেষে স্থানটি পরবর্তীতে খলশি নামে পরিচিতি পাই।
নদে সে সময়ে মিলত হরেক রকমের দেশি প্রজাতির মাছ। সেই মাছ শিকার করে মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ করতেন। নদকে ঘিরে দুই পাড়ে গড়ে উঠে অসংখ্য জেলে পল্লী। দিন কিংবা রাত সারাক্ষণই এই জেলে পল্লীর জেলেরা নদের পানিতে নৌকায় ভেসে থেকে মাছ আহরণ করতেন। শুধু তাই নয়, কপোতাক্ষের অঢেল পানিতে দেখা যেত হরেক রকমের পাখ-পাখালি। তাদের কিচিরমিচির কলরবে নদ এলাকা থাকতো মুখোরিত। এ সবই এখন স্মৃতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুগযুগ ধরে পলি জমার কারণে নদ বছরের বেশির বাগ সময় শুকিয়ে থাকে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি নদ দখলে মেতে উঠেন। তারা নদের বুকে তৈরী করেছেন বসতবাড়ি, পুকুর, ভেড়িসহ নানা কিছু। অনেকে নদকে দখল করে নানা কৌশলে আয় রোজগারও করছেন।
স্থানীয়দের দাবি, এখনই সময় নদকে বাঁচানো, তার জন্য দখলদারদের কবল থেকে নদ উদ্ধার করে খনন করতে হবে। অন্যথায় স্মৃতির পাতা থেকে নদটি হারিয়ে যাবে
খুলনা গেজেট/এমএইচবি