একসময় কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস। ওই ব্যবসার উন্নতি না হওয়ায় শুরু করেন ভিন্ন পন্থার প্রতারণা। নিজের ছবি, নাম ও ঠিকানা ঠিক রেখে প্রায় ১০ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে। তবে প্রতিটি পরিচয়পত্রের নম্বর ভিন্ন। আর এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
এমন অভিযোগে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) মিরপুর ডিওএইচএ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খান (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২০)।
শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে মিন্টু রোডে ডিবির নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, প্রতারক জয়নালের একসময় কিছুই ছিল না। সে ইমিটেশন পণ্যের দোকান করতো। কিন্তু সেই ব্যবসায় লোকসান হওয়া তা ছেড়ে দেয়। এরপর জড়িয়ে পড়ে প্রতারণার পেশায়। এরপর নামে ব্যাংক প্রতারণায়। এতে হাতিয়ার হিসেবে ছিল একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র আর পাঁচ লাখ টাকা পূঁজি। আর তাকে সহযোগিতা করতো রংপুরের জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) অফিসের এক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। কয়েকটি ব্যাংক থেকে লোন তুলে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল জয়নালের। তবে এমন পরিকল্পনার বাস্তবায়নের আগেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তিন সহযোগীসহ জয়নালকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে সেখান থেকে আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিল। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে সে মোটা অঙ্কের লোন নিতো।
জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি রয়েছে জানিয়ে হারুন বলেন, এসব এনআইডি দিয়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতো। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকতো, শুধু নম্বর নম্বর পরিবর্তন করতো। পল্লব দাসকে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সার্ভার ব্যবহার করে এসব ভুয়া এনআইডি বানিয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন এনআইড বানাতে নানা রকম ছবি ব্যবহার করেছে। কোনোটি গোঁফওয়ালা, কোনোটা দাড়ি-গোঁফ ছাড়া, কোনোটা দুই বছর আগের আবার কোনোটা পরের।
মহানগর ডিবি প্রধান হারুন বলেন, জয়নাল ডিওএইচএসে ইআর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নিয়েছিল। মূলত একটি অফিসকে সাত ভাগে সাত নামে একই ঠিকানায় বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতো। এযাবৎ জয়নাল বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কিন্তু তা ফেরত দেয়নি। আর এসব টাকায় সে বসুন্ধরা এলাকায় একটি সাত তলা বাড়ি, উত্তরা, আশকোনাসহ আট থেকে নয়টি ফ্ল্যাট ও মাদারীপুরে একটি বাড়ি করেছে।
ডিবি প্রধান আরও জানান, প্রতারক জয়নালের অফিস থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ৫০টি সিল জব্দ করা হয়েছে, যা সে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতো। ইনকাম ট্যাক্সের বিভিন্ন ভুয়া ফাইল তৈরি করতো সে। ভূমি অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন মালিকের ভুয়া দলিলও তৈরি করতো জয়নাল। তার বাসা থেকে প্রায় কয়েক বস্তা দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র ও ভাউচার তৈরি করতো সে ও তার চক্র।
এ ছাড়া জয়নাল ভুয়া দলিল বানিয়ে জমির নামজারি ও খাজনা কপি ভুয়া তৈরি করতো। এ জন্য তাকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা সহায়তা করতেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভুয়া নামজারি খারিজ কপি বিভিন্ন তারিখে সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় এনআইডি কার্ড, দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানান হারুন।
খুলনা গেজেট/কেডি