বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এর সংবাদ সম্মেলন বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বক্তব্য প্রকাশ করেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস নোটের বক্তব্যে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ইউজিসি তাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণে তদন্ত সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করে। ইউজিসি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিধায় এ প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ নেই এবং এ সংক্রান্ত নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সাহেবের অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কলিমুল্লাহ সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন যা নিতান্তই অনভিপ্রেত। তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে যে সভাটিতে মন্ত্রীর দেরিতে উপস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন সে সভাটি গেল বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সকালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে সভাটির সময় পরিবর্তন করে বিকেলে নেয়া হয়। ঐ একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা থাকায় এবং সে সভাটি উপাচার্যের সাথে আলোচনার পূর্বে হলে ভালো হয় বিবেচিত হওয়ায় সভাটির সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকার সভাটি নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অনেক প্রলম্বিত হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, সচিব এবং ইউজিসির চেয়ারম্যানসহ প্রতিনিধিবৃন্দের উপাচার্যের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় যোগ দিতে দেরি হয়। মন্ত্রী উপস্থিত সকলের কাছে অনিচ্ছাকৃত এই বিলম্বের জন্য বিশেষভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। মন্ত্রীর সময়ানুবর্তিতার বিষয়টি সবার কাছে সুবিদিত। তিনি সময় মতো সকল সভায় অংশ নেন। সেদিনের সবারই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনকই নয় নিতান্তই রুচি বিবর্জিত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকাশনার জন্য মন্ত্রীর একটি বাণী একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাওয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন চলছিল। সে পরিস্থিতিতে মন্ত্রী সে বাণীটি দেয়া সমীচীন মনে করেননি এবং এরপরে বিগত এক বছরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মন্ত্রীর কাছে আর কোন বাণী চাওয়া হয়নি।
কলিমুল্লাহ উপরোক্ত বিষয় সমূহের বাইরেও মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে রাজনীতিকে জড়িয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন যার সাথে মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে।
কলিমুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যেসব বক্তব্য রেখেছেন সে সকল বিষয়ে এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে। কারণ তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রেরিত হয়েছে। সে বিষয়ে শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় কলিমুল্লাহ কর্তৃক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত অন্যান্য সকল বক্তব্য সম্পর্কে মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন প্রাপ্তি ও বিবেচনার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় বক্তব্য উপস্থাপন করবে।
উল্লেখ্য, বেরোবির শেখ হাসিনা হল এবং ড. ওয়াজেদ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউজিসিকে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে ইউজিসি। তদন্ত কমিটি অনিয়মের সঙ্গে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর অজুহাতে অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনএ ভাইস চ্যান্সেলর, তার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার মজনুর কাদের এবং অন্যান্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেরোবি ভিসি অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইউজিসিকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনো আমরা পাইনি। এর আগেই কেন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হলো? তিনি আরও বলেন, এ ধরনের জায়গা থেকে এমন অভিযোগ অভিযোগ তোলা রাজনৈতিক অপকৌশল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়, প্রশ্রয় ও আসকারায়।
খুলনা গেজেট/ টি আই