খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে
নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠক

পাটকল ভাড়াভিত্তিক লিজে চালুর সুপারিশ

গেজেট ডেস্ক

অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে পাটকলের জমি বিক্রি করা যাবে না। আর মিলগুলো পুনরায় চালু করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) দেয়া ঠিক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ভাড়াভিত্তিক লিজ দিতে হবে। সরকারি পাটকলের সম্পত্তি ব্যবহারে কর্মকৌশল সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠকে এ ধরনের ৩৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায়ের পর সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সম্প্রতি সরকারি ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হয়েছে। মিলগুলোর যন্ত্রপাতি যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য মিলগুলো দ্রুত চালুর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে দ্রুত উৎপাদন কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে মিলগুলো ভাড়াভিত্তিক লিজ পদ্ধতি অবলম্বনের বিষয়ে সায় দিয়েছেন তিনি।

এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মিলগুলো কোন পদ্ধতিতে চালু করা যায়, এর বিদ্যমান যন্ত্রপাতি ও সম্পত্তি রক্ষাসহ সার্বিক কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল খুঁজতে বৈঠকে মিলিত হন কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫টি পাটকল শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় অবসানসহ উৎপাদন কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ আছে। মিলগুলো পিপিপি বা যৌথ উদ্যোগে বা জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে পুনরায় চালু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

এজন্য বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।’ বৈঠকে বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন বলেন, বিজেএমসির মিল ও অন্যান্য সম্পত্তি যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে এর আগে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব সার সংক্ষেপ আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে আগামী ৩ মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আগামী ২ মাসের মধ্যেই কমিটির কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন- মিলগুলোর অবস্থান, যন্ত্রপাতি, ধারণ ও মান বিবেচনায় কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে হবে। এরপর পিপিপি বা জয়েন্ট ভেঞ্চার পদ্ধতিতে পুনরায় চালু করা যেতে পারে। এছাড়া কয়েকটি মিলকে বিডা ও বেজার কাছে হস্তান্তর করা যায় কিনা সেটিও বিবেচনা করা যেতে পারে।

অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, কোনো অবস্থায় মিলের জমি বিক্রি করা যাবে না। ভাড়াভিত্তিক ইজারার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অবশ্য লিজের মেয়াদ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন মিলগুলোতে থাকা কাঁচামাল, তৈরি পণ্য, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সম্পত্তির মজুদ দ্রুত নির্ধারণ করতে হবে। আর তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। পাশাপাশি পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে তরুণ ও কর্মক্ষম শ্রমিক মিলে নিয়োগ দিতে হবে।

অর্থ সচিব আরও বলেন, বর্তমানে মিলগুলোর যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ ঘোষণা করা দরকার। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, আকার, প্রকৃতি ও যন্ত্রপাতির অবস্থান বিবেচনা করে মিলগুলো তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা প্রয়োজন। ইজারাযোগ্য মিল প্রথম ক্যাটাগরিতে আসবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে আনতে হবে বেসরকারিভাবে বিএমআরযোগ্য এবং শেষ ক্যাটাগরি হবে পিপিপির মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে অংশীদারিত্বে চালু করা যায় এমন মিলগুলো।

তিনি বলেন, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা যেতে পারে। বৈঠকে শিল্প সচিব কেএম আলী আজম বলেন, মিলগুলোর জমির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর উৎপাদিত পাটপণ্যে বৈচিত্র্য আনা ও পাটকলগুলো সংস্কারে সরকারের গঠিত কমিটির কার্যক্রমে গতি আনতে বিষয় ভিত্তিক কয়েকটি সাব-কমিটি গঠন করা দরকার।

বিটিএমসি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিটিএমসি কর্তৃক ৬১টি মিল হস্তান্তর করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শর্ত পালন করা হয়নি। হস্তান্তর পরবর্তী এসব মিলের কার্যক্রম তদারকির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, মিলগুলোর জমির মালিকানা হস্তান্তর না করে শুধু পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত রাখতে হবে। আর লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে কত মেয়াদে দেয়া হবে সেটি আগেই নির্ধারণ করা দরকার। বর্তমানে মিলগুলোর যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ ঘোষণা করলে এর মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পিপিপি বা অন্য কোনো কাঠামোতে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে সরকারের যে শেয়ার থাকবে সেটি জমির মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

বৈঠকে আরও যেসব সুপারিশ উঠে আসে সেগুলো হল- লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে পাট খাতে অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়া, হস্তান্তর পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট মাপকাঠি নির্ধারণ করা, ভাড়াভিত্তিক ইজারার মিলগুলো দ্রুত পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে একটি কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ এবং পাটপণ্য উৎপাদনে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও এ শিল্পের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আরও বড় আকারে পরামর্শক সভা করা।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল নিয়ে এর আগে নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে অগ্রাধিকার দেয়া হয় কয়েকটি বিষয়কে। সেগুলো তুলে ধরা হয় সর্বশেষ বৈঠকে। অগ্রাধিকার দেয়া বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা সংরক্ষণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও পণ্যের বিদ্যমান বাজার ধরে রাখার স্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করা সম্ভব এমন পাটকলগুলো শনাক্ত করা। এচাড়া চালু করার ক্ষেত্রে সরকারের মালিকানা ও স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখা, ভবিষ্যৎ বাজার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে বহুমুখী পাটপণ্যের জন্য প্রয়োজনী কাঁচামাল অর্থাৎ পাট সুতা ও কাপড় অভ্যন্তরীণভাবে তৈরির উপযোগী দীর্ঘমেয়াদি নীতি কৌশল নির্ধারণ। সূত্র : যুগান্তর।

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!