খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

বিল ডাকাতিয়ার মাছ চাষীদের কপাল পুড়েছে, ক্ষতি প্রায় ১শ’ কোটি টাকা

একরামুল হোসেন লিপু

টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া এবং ফুলতলা উপজেলা অংশের বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সোয়া তিন হাজার হেক্টর জমির ৮ হাজার ২৫০ টি মাছের ঘের, ক্ষেতের ফসল, কয়েক হাজার বসত বাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিল ডাকাতিয়ার প্রান্তিক মাছ চাষীরা। ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় কপাল পুড়েছে বিল ডাকাতিয়ার মাছ চাষীদের।

বিল ডাকাতিয়া তেলিগাতী মৌজার অন্যতম মাছ চাষী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক খুলনা গেজেটকে বলেন, ভাই এ বছর বিল ডাকাতিয়ায় আমরা যারা মাছ চাষী আছি আমাদের কপাল ভালো করে পুড়িছে। এমন পুড়া পুড়িছে অনেকের মাজা সোজা হয়ে দাঁড়াতি পারিছিনা।

তিনি বলেন, আমার নিজের ১৩০ একরের ৬ টা ঘেরের মধ্যে ৪ টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় ৮ কোটি টাকার মাছ। বাকি দুইটা ঘের পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে নেট জাল দিয়ে ব্যাড় দিয়ে কোনমতে টিকিয়ে রেখেছি। শুধু আমার নয় এবছর বিল ডাকাতিয়ার সব মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। শত কোটি টাকার উপরে মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আমার অন্যান্য ব্যবসা আছে বলে আমার মাজা এখনও সোজা আছে। বাকি সবার মাজা বাঁকা হয়ে গেছে। এ এলাকার মাছ চাষীরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। কিভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে? সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা তো দূরে থাক, আমাদের খোঁজখবরও কেউ নেয় না।

ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোঃ আবুবকর সিদ্দিক খুলনা গেজেটকে বলেন, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার অন্তর্গত বিল ডাকাতিয়ার ৩ হাজার ৩৬ হেক্টর জমির সাড়ে ৭ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ঘেরের মূল্যবান চিংড়ি এবং সাদা মাছ। বিল ডাকাতিয়ার ডুমুরিয়া অংশে সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা হবে।

একই উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কৃষি নির্ভর ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অধুষ্যিত রংপুর, গুটুদিয়া, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া ইউনিয়নে ধান এবং সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া অংশে কৃষি খাতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩৫ কোটি টাকার মতো হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের একটাই দাবি আমাদের ক্ষেতের পানি সরানোর ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে কৃষি অফিসে কোন সেচ যন্ত্র সরবরাহ নেই। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে তাদের কোন অফিস নেই। জেলা পর্যায়ের অফিস থেকে উপজেলা পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে বিএডিসি’র কার্যক্রম থাকলে প্রান্তিক কৃষকরা আরো উপকৃত হতেন। সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলেও আমরা প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষেতের পানি সরে যাওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করছি।

ফুলতলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ সেলিম সুলতান বলেন, টানা কয়দিনের ভারী বর্ষণে ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অংশে ৭ ‘শ ১৫ হেক্টর জমির সাড়ে ৭ ‘শ মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে এ সকল ঘেরের মূল্যবান চিংড়ি এবং সাদা মাছ। ফুলতলার ডুমুরিয়া অংশে সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক সাড়ে ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে।

তিনি বলেন, ভারী বর্ষণের পূর্বে আমরা চাষীদেরকে ঘেরগুলো নেট জাল দিয়ে ঘিরে রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করি। ইতিমধ্যে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার কারণে যে সকল মাছ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রস্তুুতের কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছি, ভবিষ্যতে সরকারি কোন সহায়তা প্রদান করা হলে তালিকা উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

একই উপজেলার কৃষি অফিসার মোসাঃ রাজিয়া সুলতানা খুলনা গেজেটকে বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ফুলতলা উপজেলার বিল ডাকাতিয়া অংশে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ধান এবং বিভিন্ন প্রজাতির সবজি। এ এলাকার ১৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হেক্টর জমির ধান এবং বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!