ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিউজ পোর্টালটির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অমিত চক্রবর্তীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) নিউজক্লিকের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকদের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। দিল্লি এবং মুম্বাই জুড়ে ২০টি স্থানে সাংবাদিকদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ বাড়ি থেকে নথিপত্র ও ল্যাপটপ জব্দ করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক সাংবাদিক।
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৭ জন সন্দেহভাজন পুরুষকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, ৯ জন সন্দেহভাজন নারীকে তাঁদের নিজ নিজ অবস্থানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ডিজিটাল ডিভাইস, নথিপত্র ইত্যাদি জব্দ বা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া এখনো চলছে। এখনো পর্যন্ত দুইজন অভিযুক্ত—প্রবীর পুরকায়স্থ এবং অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত এখনো চলছে।
২০১১ সালে ভারতের ফিন্যান্সিয়াল এনফোর্সমেন্টের কর্মকর্তারা নিউজক্লিকের অফিসে অভিযান চালান। পরে একটি আদালত পত্রিকাটির বিরুদ্ধে কোনো ‘জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।
দুই মাস আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলে, চীনপন্থী কনটেন্ট প্রচারের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিউজক্লিকের সংশ্লিষ্টতা আছে। এর জন্য এই নেটওয়ার্ক চীনা অনুদান পায়।
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দিল্লি পুলিশের সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে, নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে গত ১৭ আগস্ট বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন নামে পরিচিত একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে মামলা হয়েছিল। মঙ্গলবার এই মামলার সূত্র ধরেই সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভারত সরকার মূলত বিরোধী মত দমনের জন্যই এই আইন ব্যবহার করে থাকে।
দিল্লি পুলিশ দাবি করছে, নিউজক্লিক চীনের সঙ্গে কথিত সম্পর্কযুক্ত সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৩৮ কোটি রুপি পেয়েছে। ওয়েবসাইটে চীনপন্থী বিষয়বস্তু প্রচারের জন্য এই তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে।
বিরোধীরা বলছেন, এটি সরাসরি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ।
পুলিশের সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ২৯ কোটি রুপি রপ্তানি পরিষেবার জন্য ফি হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারসাজি করতে ৯ কোটি রুপির এফডিআই (বিদেশি বিনিয়োগ) হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকার ভাগ পেয়েছেন মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সিতালভ এবং গৌতম নভলাখা। যদিও এই মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি সরকার।
সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে, কেন্দ্র সরকারকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং সংবাদপত্রকে ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে কঠোর ফৌজদারি আইন তৈরি না করার আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কঠোর আইনের ছায়ায় ভয় দেখানোর পরিবেশ হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভিন্নমত ও সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরের ওপর আঘাত।
খুলনা গেজেট/এইচ