মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া শতাধিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী সীমান্তে আটকা পড়েছেন। দেশে ফিরতে তারা ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যুরো অফিসে আবেদন করার পরও ক্লিয়ারেন্স পাচ্ছেন না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাংলাদেশিরা। একইসাথে তারা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ কারণে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতে মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার কারণেই বাংলাদেশি সেবাগ্রহীতারা বিড়ম্বনায় পড়েছে। ওই শর্ত অনুযায়ী যারা মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাবেন তাদেরকে নির্ধারিত হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের কাছেই দেখাতে হবে। এর বাইরে অন্য কোথাও ডাক্তার দেখালে দেশে ফেরার জন্যে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যুরো অফিসে আবেদন করে ক্লিয়ারেন্স নিতে হচ্ছে। এই ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে চরম ধীরগতির পরিচয় দিচ্ছে ভারতীয় এ সংস্থাটি।
একজন ভুক্তভোগী জানান, আমার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম জটিল রোগে আক্রান্ত। স্বজনদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় গতমাসে বাবাকে নিয়ে ভারতে যাই। আসার আগে দূতাবাসের শর্ত অনুযায়ী কলকাতার একটি হাসপাতালের প্রত্যায়নপত্র দেখাই। কিন্তু ভারতে এসে জানতে পারি হায়দরাবাদে আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। পরে কলকাতায় না দেখিয়ে হায়দরাবাদে চিকিৎসা করানো হয়। পরে বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অপারেশনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই।
তিনি বলেন, গত ২১ জুন ফেরার সময় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে জানতে চায়, কলকাতায় না দেখিয়ে কেন হায়দরাবাদে ডাক্তার দেখিয়েছি। একপর্যায়ে আমাদের দেশে ফেরার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়। একইসঙ্গে ভুল স্বীকার করে অনলাইনে ইমিগ্রেশন ব্যুরোতে আবেদন করতে বলেন কর্মকর্তারা। বাধ্য হয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠি এবং অনলাইনে আবেদন করি। কিন্তু আবেদনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইমিগ্রেশন থেকে অনুমতি না আসায় দেশে ফিরে যেতে পারছি না। আমাদের হোটেলেই থাকতে হচ্ছে। কবে ফিরতে পারবো তাও জানি না। আমাদের মতো অনেকেই মেডিকেল ভিসায় ভারতে এসে দেশে ফেরার পথে এ সমস্যায় পড়ছেন। ভারতীয় দূতাবাসের খামখেয়ালিপনার কারণে আমাদের এ ভোগান্তি শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উন্নত চিকিৎসাসেবা, উচ্চশিক্ষা, ব্যবসার খোঁজখবর ও দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে প্রতিবছর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে ২০ থেকে ২২ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছেন ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৭ জন। আর গত অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। এ খাত থেকে ভিসা ফি বাবদ বেনাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ভারতীয় দূতাবাসের বছরে আয় ১২০ কোটি টাকার বেশি।
বেনাপোলে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাগজপত্র ঠিক থাকলেও মায়ের ভিসা দিলেও সঙ্গে থাকা বাচ্চার ভিসা অনেক সময় পাওয়া যায় না। পরেরবার আবেদনের জন্য রাখা হয়। এছাড়া মেডিকেলের ক্ষেত্রে ছয় মাসের ভিসা দিলেও অনেক সময় একবার ভ্রমণের সুযোগ মিলছে। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পূর্ণ হচ্ছে না। পরে আবার ভিসা করাতে বা দীর্ঘসময় ভারতে থেকে চিকিৎসা শেষ করতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
তারা বলেন, ছয় মাসের মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসায় মাসে দু’বারের বেশি পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভ্রমণ করা যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় বিজনেস ভিসায় বারবার গেলেও নানা জবাব দিতে হয়। অথচ ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা এ ধরনের কোনো শর্ত ছাড়াই অনায়াসে ব্যবসা, চাকরি বা স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশে আসেন।
পাসপোর্টযাত্রী রহমান বলেন, মেডিকেল ভিসায় আগে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার বুকিং নিয়ে সেই ডাক্তারকেই দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। তবে এখন সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয় বাড়াতে দূতাবাস এ পদ্ধতি অবলম্বন করছে বলে লোকমুখে শুনেছি। তিনি বলেন, অনেকে বাধ্য হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যান। কিন্তু দেশে ফেরার সময় বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল সংকটে ৪-৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মেডিকেল ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমার সিরিয়াল নিতে যদি দুইমাস অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে জরুরি চিকিৎসা কীভাবে পাবো?
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, দ্রুত বেনাপোল বন্দর পার হলেও পেট্রাপোল বন্দরে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে বলে শুনেছি। সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সভায় পেট্টাপোল কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেও তারা সেটা মানছেন না।