অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে ভারতে পাচার করে নির্যাতন কেন্দ্রে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার তিন জন হলেন-মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২), বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)। তাদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, নকল ভিসা, আবেদনপত্র ও মানবপাচার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র জব্দ করার কথা জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই তিন জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, এই চক্রটি কয়েক বছর ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। সেলিম এই চক্রের হোতা। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বুলবুল এবং নিরঞ্জন। সেলিমের চক্রে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত সাত সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া ভারতে এই চক্রেরই তিন জনের বিষয়ে তথ্য মিলেছে।
তিনি বলেন, সেলিমের চক্রটি বিদেশে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের টার্গেট করে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। এরপর ওইসব উন্নত দেশে নেওয়ার কথা বলে পাশের দেশে পাচার করে দেয়। ভারত থেকে ওই দেশগুলোতে ভিসা পাওয়া সহজ-এমন বুঝিয়ে তাদের প্রতারিত করে সেখানে নিয়ে নিজেদের নির্যাতন সেলে আটকে রাখে। এরপর সেলিমের ভারতীয় সহযোগীরা বিদেশ গমনেচ্ছুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে পরে সেই ভিডিও দেশে পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।
অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে চক্রটি জনপ্রতি ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতো জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথমে কলকাতায় টর্চার সেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দিল্লির সেলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি ভারতের নির্যাতন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে সেলিমের চক্রটিকে চিহ্নিত করা হয়। এই সেলিম ও বুলবুল জাহাঙ্গীরকে অস্ট্রেলিয়া এবং জাহাঙ্গীরের ভাগ্নে আকাশকে নেদারল্যান্ডসে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে পাঠানোর জন্য ৩৪ লাখ টাকা দাবি করে। ১৪ লাখ টাকা নেওয়ার পর নকল ভিসায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে জাহাঙ্গীর ও তার ভাগ্নে আকাশকে ভারতে পাঠায় এরা। সেখানে পাচারের পর থেকে এই দুইজন চক্রের সদস্য নিরঞ্জন এবং ভারতের সহযোগীদের হাতে আটক ছিলেন। সে সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও মৃত্যুভয় দেখিয়ে পরিবারগুলোর কাছ থেকে আরও ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, জাহাঙ্গীর কৌশলে পালিয়ে আসতে পারলেও তার ভাগ্নে আকাশ এখনও ভারতে পাচারকারীদের হাতে আটক। ওই দু’জন ছাড়া ও নিরঞ্জন পাল ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল ও মালটা পাঠানোর নামে নবাবগঞ্জের বিল্লাল হোসেন, রবিন হোসেন ও শাহীন খান নামে তিন জনকে ভারতে পাচার করেছে। তারা সেখানে নির্যাতন সহ্য করে মুক্তিপণ দিয়ে ছয় মাস পর দেশে ফেরত এসেছে।
গ্রেপ্তার তিন জন র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কলকাতায় তাদের সহযোগী হিসেবে রাজীব খান, মানিক ও দিল্লির রবিন সিং দায়িত্ব পালন করে থাকে।
খুলনা গেজেট/ এস আই