সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যেই মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। বুধবার (৯ অক্টোবর) ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আর দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে শেষ মুহুর্তের বেচাকেনায় ব্যাস্ত সময় পার করছে খুলনার শপিংমল ও বিপনী বিতানগুলো। বিক্রেতারা বলছেন অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা তবে, পন্য কেনাবেচা আগের মতোই আছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সৃষ্ট নাজুক পরিস্থিতিতে পূজার বেচা-বিক্রি নিয়ে সংশয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভারতের ভিসা নীতির কারণে পূজোর কেনাকাটায় ভারত যেতে পারেনি অনেক বাংলাদেশি। আর এখানেই, আশার আলো দেখছেন দেশের ব্যাবসায়ীরা।
সোমবার খুলনা নগরীর দৌলতপুর, নিউমার্কেট, ডাকবাংলোসহ একাধিক শপিং মলে সরেজমিনে দেখা গেছে, পূজা উপলক্ষে চলছে জমজমাট কেনাবেচা।
এছাড়াও আড়ং, ইনফিনিটি, সেইলর, অঞ্জন, লা-রিভসহ শিববাড়ি ও নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন পোশাকের শো-রুম গুলোতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। ডাকবাংলো মোড়ের জুতার দোকানগুলোতেও দেখা গেছে গেল একই চিত্র। বাটা, বে এম্পোরিয়াম, এপেক্সসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের জুতার শো রুম গুলোও পিছিয়ে নেই বেচা বিক্রিতে।
বিক্রেতারা বলেছেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দুর্গাপূজায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি। তবে বেচাকেনা আগের মতোই হচ্ছে। সময় মতো ভিসা না পাওয়ায় অনেকে কেনাকাটা করতে কলকাতায় যেতে পারেনি। এ কারণে তারা দেশেই কেনাকাটা করেছেন। তবে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। তাই অনেকেরই দামে পোষাচ্ছে না বলে দামাদামি করে ফিরে যাচ্ছেন।
নগরীর খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা মৌ দাস পরিবার সহ এসেছেন বড়বাজার শাড়ির মার্কেটে। জানতে চাইলে তিনি খুলনা গেজেট’কে বলেন, মহালয়ার আগেই পরিবারের সবার কেনাকাটা শেষ করেছি, এখন আত্মীয় পরিজনদের জন্য কিনছি। অন্যান্য বারের তুলনায় দাম বেড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পন্যের দাম কি কখনও কমে। সরকার দাম কমানোর নির্দেশ দিলেও ব্যবসায়ীরা দাম কমায় না। এদেশে সরকারের থেকে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষমতাশালী।
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, দেশের বাজারে উৎসবকে কেন্দ্র করে মোট বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশ হয় দুই ঈদে এবং বাকিটা হয় পহেলা বৈশাখ ও দুর্গাপূজায়। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, পূজার সময় শাড়ি ও স্যালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি পাঞ্জাবির বেশি চাহিদা থাকে।
নগরীর শিববাড়ির একটি পোশাকের শোরুমে কথা হয় ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী মিলন মন্ডলের সাথে, তিনি জানান, এই পূজা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। পূজায় সকলকে উপহার দেওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে। স্ত্রী, মা-বাবা সহ পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা করেছি।
তিনি আরও বলেন, শিববাড়ির ফ্যাশান শোরুম গুলোতে অন্যান্য মার্কেটে তুলনায় ভিড় একটু কম থাকে। তবে এখন যেহেতু দুপুর, বিকালে বা সন্ধায় ভিড় অনেকটাই বাড়বে।
ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে খুলনার বড় বাজারের হকার্স মার্কেটের প্রসাধনীর দোকানগুলোতে। পূজা উপলক্ষে দর্জির দোকানগুলোতেও ব্যাপক ক্রেতা সমাগম হচ্ছে।
ডাকবাংলার পোশাক ব্যাবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় বেচাকেনা মোটামুটি চলছে, বিক্রি একেবারে যে নেই তা না। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা যে ধরনের বিক্রি প্রত্যাশা করে সেটা নেই। সব কিছুর সাথে সাথে পোশাকেরও দাম বাড়ছে, কি করবো? লস করে তো আর মাল বিক্রি করতে পারবো না।
এদিকে, দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে পিছিয়ে নেই খুলনার ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলে। রোদ-বৃষ্টি সহ নগরীর ট্রাফিকের দৌরাত্ম এড়াতে অনেকেই কেনাকাটা সারছেন অনলাইন থেকে।
অনলাইন ঘুরে দেখা যায় খুলনা অনলাইন সেলার গ্রুপ, খুলনা অনলাইন শপিং, খুলনা লেটেস্ট অনলাইন শপিং জোনসহ অনেক ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে ক্রেতা চাহিদার তুঙ্গে। এবস পেজ এবং গ্রুপের উদ্যোক্তারা ক্রেতা আকর্ষনে দিচ্ছেন অনেক অফার, প্রতিনিয়তই চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারনা।
খুলনা গেজেট/এএজে