দু’যুগের ব্যবধানে প্রকৃতির পরিচ্ছন্ন কর্মী শকুন ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। শকুন কমে আসায় মৃত প্রাণির দেহে সৃষ্ট ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে ৪০ প্রকার সংক্রমক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও প্রাণি। জীবনঘাতি রোগ থেকে বাঁচাতে এবং মহাবিপন্ন প্রাণি শকুনের প্রজনন বৃদ্ধিতে এক শ’ কিলোমিটার দু’টি অঞ্চলকে শকুনের নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিরাপদ স্থান দক্ষিণের ১৬ জেলা।
ভারতে ১৫ হাজার ৪০৯ বর্গ কিলোমিটার এবং সিলেট ১৯ হাজার ৬৬৩ বর্গ কিলোমিটার শকুনের নিরাপদ এলাকা । আর সুন্দরবন অঞ্চলে নিরাপদ এলাকা ২৭ হাজার ৭১৭ বর্গ কিলোমিটার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-এর বন অধিদপ্তরের মহাবিপন্ন প্রাণি শকুন শিরোনামের এক প্রকাশনায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯০ সালে দেশে ১০ লাখ শকুন ছিল । ২০১৪-২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী এর সংখ্যা মাত্র ২৬০ টি । আই ইউ সি এন পরিস্থিতি বিবেচনায় একে মহাবিপন্ন প্রাণি হিসেবে ঘোষণা করেছে |
এ প্রাণি কমার পেছনে অন্যতম কারণ গবাদি পশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন নামক ওষুধ ব্যবহারে মৃত গরুর মাংস খেয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে দু’তিন দিনের মধ্যে শকুন মারা যায় । এছাড়া বাসস্থানের জন্য বড় গাছ নিধন , খাদ্য সংকট, কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে শকুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ এর অভাব।
শকুনের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে ২০১৬-২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ শকুন রক্ষা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পরিকল্পনার আওতায় বৃহত্তর সিলেট ও সুন্দরবনের বনাঞ্চলকে শকুনের নিরাপদ স্থান বলে ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সুন্দরবন অঞ্চলের আওতাভুক্ত জেলাগুলো ফরিদপুর, মাগুরা ,ঝিনাইদহ, যশোর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, শরীয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর,(ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বাদে), ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ও বরগুনা। সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যকে শকুনের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বনাঞ্চলে বাংলা , সরু-ঠিটু ও হিমালয়ী প্রজাতির একশ’ শকুনের বসবাস। নিরাপদ এলাকায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ এ জাতীয় ওষুধের প্রেসক্রিপশন বন্ধ, শকুনের বাসা, প্রজন্মের জন্য গাছকাটা বা নষ্ট না করার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী এ প্রকাশনায় উল্লেখ করেছেন, সুন্দরবনের ঘাঘরামারিতে শকুনের জন্য খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে । শকুন সংরক্ষণ এর জন্য পশুর চিকিৎসা ডাইক্লোফেনাক ঔষধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে শকুনের প্রজনন কমতে শুরু করেছে। জনসচেতনতা বাড়ার ফলে শকুনের প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসুস্থ ও আহত শকুনের চিকিৎসার জন্য খুলনা মহানগরীতে বন্যপ্রাণি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে সুন্দরবন অঞ্চলের শকুনের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, শকুন দ্রুত গবাদি পশুর মৃত দেহ খেয়ে প্রকৃতিকে পরিস্কার ও রোগমুক্ত রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে । এ প্রাণির পরিপাকতন্ত্র এ্যানথ্রাক্সসহ সব ধরণের প্যানথোজেন ধ্বংস করতে সক্ষম। তাতে এ্যানথ্রাক্সসহ অন্যান্য রোগ যেমন, প্রাণি থেকে মানবদেহে রোগ জীবানু ছড়ায়, এমন জীবানু বিস্তাররোধে শকুনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি