খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু
দু’যুগের ব্যবধানে কমেছে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ

ভারতবর্ষে মহাবিপন্ন প্রাণি শকুনের বড় নিরাপদ স্থান এখন দক্ষিণের ১৬ জেলা

কাজী মোতাহার রহমান

দু’যুগের ব্যবধানে প্রকৃতির পরিচ্ছন্ন কর্মী শকুন ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। শকুন কমে আসায় মৃত প্রাণির দেহে সৃষ্ট ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে ৪০ প্রকার সংক্রমক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও প্রাণি। জীবনঘাতি রোগ থেকে বাঁচাতে এবং মহাবিপন্ন প্রাণি শকুনের প্রজনন বৃদ্ধিতে এক শ’ কিলোমিটার দু’টি অঞ্চলকে শকুনের নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিরাপদ স্থান দক্ষিণের ১৬ জেলা।

ভারতে ১৫ হাজার ৪০৯ বর্গ কিলোমিটার এবং সিলেট ১৯ হাজার ৬৬৩ বর্গ কিলোমিটার শকুনের নিরাপদ এলাকা । আর সুন্দরবন অঞ্চলে নিরাপদ এলাকা ২৭ হাজার ৭১৭ বর্গ কিলোমিটার।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-এর বন অধিদপ্তরের মহাবিপন্ন প্রাণি শকুন শিরোনামের এক প্রকাশনায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯০ সালে দেশে ১০ লাখ শকুন ছিল । ২০১৪-২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী এর সংখ্যা মাত্র ২৬০ টি । আই ইউ সি এন পরিস্থিতি বিবেচনায় একে মহাবিপন্ন প্রাণি হিসেবে ঘোষণা করেছে |

এ প্রাণি কমার পেছনে অন্যতম কারণ গবাদি পশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন নামক ওষুধ ব্যবহারে মৃত গরুর মাংস খেয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে দু’তিন দিনের মধ্যে শকুন মারা যায় । এছাড়া বাসস্থানের জন্য বড় গাছ নিধন , খাদ্য সংকট, কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে শকুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ এর অভাব।

শকুনের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে ২০১৬-২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ শকুন রক্ষা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পরিকল্পনার আওতায় বৃহত্তর সিলেট ও সুন্দরবনের বনাঞ্চলকে শকুনের নিরাপদ স্থান বলে ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সুন্দরবন অঞ্চলের আওতাভুক্ত জেলাগুলো ফরিদপুর, মাগুরা ,ঝিনাইদহ, যশোর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, শরীয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর,(ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বাদে), ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ও বরগুনা। সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যকে শকুনের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বনাঞ্চলে বাংলা , সরু-ঠিটু ও হিমালয়ী প্রজাতির একশ’ শকুনের বসবাস। নিরাপদ এলাকায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ এ জাতীয় ওষুধের প্রেসক্রিপশন বন্ধ, শকুনের বাসা, প্রজন্মের জন্য গাছকাটা বা নষ্ট না করার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী এ প্রকাশনায় উল্লেখ করেছেন, সুন্দরবনের ঘাঘরামারিতে শকুনের জন্য খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে । শকুন সংরক্ষণ এর জন্য পশুর চিকিৎসা ডাইক্লোফেনাক ঔষধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে শকুনের প্রজনন কমতে শুরু করেছে। জনসচেতনতা বাড়ার ফলে শকুনের প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসুস্থ ও আহত শকুনের চিকিৎসার জন্য খুলনা মহানগরীতে বন্যপ্রাণি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে সুন্দরবন অঞ্চলের শকুনের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, শকুন দ্রুত গবাদি পশুর মৃত দেহ খেয়ে প্রকৃতিকে পরিস্কার ও রোগমুক্ত রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে । এ প্রাণির পরিপাকতন্ত্র এ্যানথ্রাক্সসহ সব ধরণের প্যানথোজেন ধ্বংস করতে সক্ষম। তাতে এ্যানথ্রাক্সসহ অন্যান্য রোগ যেমন, প্রাণি থেকে মানবদেহে রোগ জীবানু ছড়ায়, এমন জীবানু বিস্তাররোধে শকুনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!