যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতায় ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারে না শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, যশোরের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। এবার জলাবদ্ধতা রুপ নিয়েছে ভয়াবহতা, ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।
এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে অভয়নগর উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে আসতে পারছে না কোন ছাত্র ছাত্রী। মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পানিতে পরিপূর্ণ। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার রাস্তা ও চারপাশের বাড়িঘর পানির নিচে। এ অবস্থায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাদপ্তর জানিয়েছে, উপজেলায় মোট ১১৭ টি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দলী ইউনিয়নের ১২টির মধ্যে সবকটিতেই এবং চলিশিয়া ইউনিয়নের ১১টির মধ্যে ৪টি প্রাইমারি স্কুলে শ্রেণিপাঠদান বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো ডুমুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বলারাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিঘলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডহরমশিয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডহরমসিয়াহাটি উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাঙ্গা মশিয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সড়াডাঙ্গা জামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সড়াডাঙ্গা ডহরমশিয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর ময়নামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলেরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের আটটি বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হল সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সুন্দলী সৈয়দপুরট্রাস্ট স্কুল এন্ড কলেজ, ডহরমশিয়াটি উত্তরপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডুমুরতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফুলেরগাতী হরিশপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সড়াডাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মশিয়াহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ের মাঠে কোমর সমান পানি। শ্রেনিকক্ষেও তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত পানি। কোমর সমান পানি পেরিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যেতে হচ্ছে স্কুলে। লঘুচাপের ফলে গত ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর একাধারে বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সোড়াডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী অরুণ কুমার বলেন, আমাদের স্কুলটা জলের তলে। স্কুলে যাওয়ার কোন উপায় নেই। আমাদের বাড়িঘর জলের তলে।
রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান মল্লিক বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে মাঠে, পথে ও চারপাশে কোমর পর্যন্ত পানি থাকায় প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না। ক্লাসের ভিতর প্রায় এক ফুট পানি। বাড়িঘরে পানি উঠায় এলাকার দশটি পরিবার তাদের বাড়ি ছেড়ে স্কুলের বিল্ডিংয়ের দোতলায় তিনটি রুমে অবস্থান করছে। ফলে ক্লাস করার ন্যূনতম পরিবেশ এখানে নেই। তাই টিও স্যারের নির্দেশে ক্লাস কার্যক্রম প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে।
সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম ধর জানান, স্কুলের মাঠে কোমর সমান জল আর শ্রেণিকক্ষে এক থেকে দেড় ফুট জল তাই পরিবেশ না থাকায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) আবুল কাশেম বলেন, ‘উপজেলার ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি জমেছে। যাওয়া আসার পথে কোথাও হাটু পানি কোথাও কোমর পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না তাই প্রায় দু’সপ্তাহ পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শুধু শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছেন।’
অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে ও অফিসরুমে পানি ঢুকে পড়ায় বেশ কিছুদিন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদানের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, আমরা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে প্রত্যেকটা স্কুলের তালিকা করেছি। যে স্কুলগুলোতে পাঠদান করা সম্ভব সেগুলো হচ্ছে। আর যেগুলো জলাবদ্ধতায় আছে সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম